ইয়াসির রাফা »
নগরীর সেগুন বাগান তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার এক শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত মাদরাসা ছাত্রের মা, মুফতী নুর মোহাম্মদ (২৬) নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন ।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, ছাত্রদের বলাৎকারের (ধর্ষণ) ভয়ানক নেশা ওই শিক্ষকের। কোমলমতি ছাত্রদের নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করতো তার ইচ্ছা পূরণ করতে। যদি কোন ছাত্র তার কাজে অস্বীকৃতি জানাতে চাইতো তখন তিনি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মুখ বন্ধ করাতেন। এমনকি কাউকে বললে, হাফেজ হতে পারবে না, এই মাদ্রাসায় পড়তে পারবে না এবং জাহান্নামে যাবে এমন কথা বলে নির্যাতিতকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন মুফতী নুর মোহাম্মদ।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, সেগুন বাগান তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার নাজারা শ্রেণীতে কোরআন শিক্ষা করতেন নির্যাতিত ছাত্রটি। বয়স ১২ বছর। গত ২৪ মার্চ রাত আনুমানিক নয়টার সময় রাতের খাবার খেয়ে চাপমুক্ত হতে বাথরুমে যায় সে। ফেরার পথে ওই শিক্ষকের সাথে ছাত্রটির দেখা হয়ে যায়, তখন শিক্ষক তাকে নিজ রুমে যাবার নির্দেশ দিয়ে পান খেতে চলে যান। পরবর্তীতে ওই শিক্ষক রুমে প্রবেশ করলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয় এবং ছাত্রটিকে তার পা টিপে দিতে বলেন।
নির্যাতিত ছাত্রটি তার কথা মতো পা টেপা শুর করলে এক পর্যায়ে শিক্ষকটি বর্ণিত ছাত্রের পড়নে থাকা লুঙ্গি খুলে ফেলে। এতে ছাত্রটি অস্বস্তিবোধ করলে শিক্ষক তাকে জোর করে বিছানায় শুইয়ে দেয় ও পায়ুপথে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে লোকজনকে না বলার জন্য ছাত্রটিকে ২০ টাকা দিয়ে তাকে কসম কাটান ওই শিক্ষক এবং কাউকে এ ঘটনা বললে হাফেজ হতে পারবে না, এই মাদ্রাসায় পড়তে পারবে না এবং জাহান্নামে যাবে এমন কথা বলে নির্যাতিতকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন মুফতী নুর মোহাম্মদ।
সুত্র থেকে আরও জানা যায়, পরবর্তীতে ওই ছাত্রকে বিভিন্ন সময়ে একাধীকবার ধর্ষণ করে ওই শিক্ষক। এদিকে ছাত্রটির বাবা না থাকায় তার দায়দায়িত্ব পালন করেন মা। করোনার কারণে সারাদেশে লকডাউন ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকায় ছাত্রটিকে এর মাঝে আর দেখতে আসতে পারেননি মা। পরবর্তীতে লেখাপড়ার খরচ চালাতে কষ্ট হওয়ার ফলে ১৭ অক্টোবর মাদ্রাসা থেকে ছেলেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন নির্যাতিত মাদ্রাসা ছাত্রের মা। বাড়ির কাছাকাছি স্বল্পখরচের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে চাইলে ছেলে মাদ্রাসায় পড়ালেখা করবে না বলে জানায়। এক পর্যায়ে মা রাগারাগি করলে সে কান্না শুরু করে এবং সমস্ত ঘটনা জানায়।
এ বিষয়ে সেগুনবাগান তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার নির্বাহী পরিচালক আজহার উদ্দিন বলেন, মুফতী নুর মোহাম্মদকে আমরা সাময়িকভাবে বরখাস্থ করেছি। তার নামে যেহেতু মামলা হয়েছে, এখন প্রশাসন সত্যতা যাচাই করার মাধ্যমে মূল ঘটনা বের করবে। এ ব্যাপারে আগে কোন প্রকার অভিযোগ তারা পাননি বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মুফতী নুর মোহাম্মদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি পলাতক আছেন বলে জানা যায়। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নাম্বারটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া যায়।
খুলশী থানার ওসি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার যে বিষয়টি তা তো আপনারা জানেন। এই ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সেগুনবাগান তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার পারিচালকের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাধারা/এফএস/ইরা













