২৪ অক্টোবর ২০২৫

বাঁশখালীতে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের, টুং টাং শব্দে মুখরিত কামার পল্লী

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী »

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব ঈদুল আজহা। আর এ ঈদকে সামনে রেখে পশু কোরবানির সরঞ্জাম জোগান দিতে কামার দোকানগুলো হাপর টানা আর লোহার উপর টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাঁশখালীর বিভিন্ন কামার পাড়া ও কামার দোকান। নানা রকম ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের। দম ফেলারও সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে চলছেন তারা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। কেউ ভারি হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুনরঙা লোহার দণ্ড। কেউ পোড়া দা ও ছুরিতে দিচ্ছেন শান। কেউবা হাপর টেনে বাতাস দিচ্ছেন।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পুইঁছড়ি, পূর্ব চাম্বল, পূর্ব জলদি, গুনাগরি, সাধনপুরে কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে কামারশালাগুলো। এ বছর দা, ছুরি, চাকু ও বটির বেচাকেনা বেড়েছে। তবে কারিগররা বলছেন, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম।

জানা যায়, এ বছর প্রতি পিচ চাকু ১৫০-২৫০ টাকা, দা ৩০০-৬০০ টাকা, ৬০০ টাকা কেজি দরে চাপাতি, জবাই ছুরি ৮০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া পুরানোসব যন্ত্রপাতি শান দিতে গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। সারা বছর তেমন কাজ না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পৈতৃক এই পেশা পরিবর্তন করছেন বলে জানা গেছে।

চাম্বল বাজারের মিলন কর্মকার বলেন, গত বছরে এই ঈদের সময় দিনে ৩ হতে ৪ হাজার টাকা রোজগার হলেও এ বছর সেই তুলনায় বেচাবিক্রি নেই। এ বছর দিনে কত টাকা আয় হয় আপনার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দিনে মাত্র এক হাজার ১২শ টাকার রোজগার হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় অনেক কম।

বিশ্বনাথ কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদে তারা প্রতি বছর দা, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করেন। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। তাদের আশা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

হরিনাথ কর্মকার জানান, সারা বছর দা, বটি, চাকু, ছুরি, চাপাতি সহ কৃষি উপকরন তৈরীর কাজ থাকে তাদের। হালে যোগ হয়েছে রিক্সা ভ্যানগাড়ির যন্ত্রাংশ বানানোর কাজ। চায়নার তৈরি স্টিলের জিনিস বাজার দখলে নেয়ার কারণে প্রাচীন শিল্পের কারিগররা আদি পেশা পরিবর্তন শুরু করেছেন। তবু এই পেশা যেনো অন্য রকম নেশা তাদের। এ কারণে কোরবানির ঈদ এলে আশায় বুক বাধেন তারা। কারণ এ সময়ে পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে লোহার তৈরি দা, বটি, চাপাতি, ছুরির প্রয়োজন হয়। এসব জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কামারদের দম ফেলার সময় থাকে না।

এদিকে ক্রেতারা জানান, কোরবানি ঈদের আর মাত্র ৪ দিন বাকি। তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছি। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বঁটির দাম একটু বেশি বলে জানান তারা।

বাঁশখালী উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে রয়েছে একাধিক কামার পল্লী। এসব জায়গায় কাজ করেন অন্তত শতাধিক কামার। বছরের অন্যান্য সময় বাজার মন্দা হলেও কোরবানির ঈদে তা পুষিয়ে নিতে পারবেন। এমন আশায় বুক বাধেন এসব কার্মকারেরা।

আরও পড়ুন