রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী »
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই সবুজ-বেগুনি রঙের শিম ফুলে প্রকৃতি যেন একাকার। শীত মৌসুমের শুরুতে মনোরম শিমের ফুলে ভরে উঠেছে বাঁশখালীর মাঠ-ঘাট, খাল-বিল ও ঘের-পুকুরের পাড়। এই মৌসুমে পুরো উপজেলাজুড়েই ৩৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে শীতকালীন এই সবজি। শিমের বাম্পার ফলন ও শিমের ভালো বাজারমূল্য থাকায় উপজেলার শিম চাষিদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কালিপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বৈলছড়ি, জলদি, শিলকুপ, চাম্বল, শেখেরখীল ও পুইছড়ি জুড়ে শুধু শিম আর শিম। বাঁশখালীর প্রধান সড়কের চার পাশের শিম চাষও যেন এক অপরুপ সৌন্দর্য। অন্যন্য সবজি ক্ষেত, ধান ও মাছের ঘেরের আইলেও করা হয়েছে শিম চাষ। পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও শুধু শিম আর শিম চাষ। চাষিরা ক্ষেত থেকে প্রতিদিন দফায় দফায় তুলছেন শিম। শিম গাছগুলোতে আবারও নতুন করে আসছে ফুল। তাতে চাষিরা আরও মহা খুশি। তাছাড়াও ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রায় একই রকম ফলন হবে। শিমের ভালো বাজার মূল্য ও বাম্পার ফলনে কৃষকদের ঘরে ঘরে বইছে খুশির আমেজ।
উপজেলার শিম চাষীরা জানায়, অন্যন্য বছরের তুলনায় এই বছর শিমের ভালো ফলন হয়েছে। সাথে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দামও বেশি। বাজারে শিমের চাহিদা বেশি থাকায় পাইকারদের শিম দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। তাতেই কচি ও তুলনামূলক ছোট শিমগুলো ছিড়েই ফেলতে হচ্ছে। বর্তমানে খুচরা ও পাইকার বাজারে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা মৌসুমের শুরুতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হত বলে জানায় তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে এই মৌসুমে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার কৃষক শিম চাষ করেছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ টন করে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। এইবারে সবুজ-বেগুনী ও লাল ফুল জাতের শিম বেশি চাষ করেছে চাষিরা। উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ জমিতেই এই জাতের শিম আবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে শিমের বেশ ভালো দাম রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে শিম প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। তবে এখন তা নেমেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

উপজেলার শিলকুপ ইউনিয়নের শিম চাষি বদিউল আলম বলেন, অন্যন্য বছরের তুলনায় এই বছর শিমের ভালো চাষ হয়েছে। দামও বেশ ভাল। তবে মাঝখানে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে’র অতি বৃষ্টি হওয়াতে শিম ক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাবছিলাম সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে, শিমের বাম্পার ফলনও হল, দামও পেলাম ভাল। তবে তিনি বাম্পার ফলনে খুশি হলেও এলাকায় চুরের উপদ্রব বাড়ায় ক্ষেত নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানায়।
কালিপুরে ইউনিয়নের শিম চাষি মতি মিয়া বলেন, এই বছর আমি ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেশ কিছু সবজি চাষ করেছি। তবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে’র বৃষ্টিতে বেশ লোকসান হয়েছিল। তবে ২ বিঘা জমিতে চাষ করা শিম বিক্রি করে সে লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠব। তিনি আরও বলেন আগেকার দিনে আমরা শিম ভিটে বাড়িতে ও ক্ষেতের আইলে শিম লাগাতাম। আর জমিতপ লাগাতাম ধান। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে তাই শিম চাষ করতে জমি, ভিটা, রাস্তাঘাট, খাল কিছুই বাদ নেই। যার যেখানে জমি ফাঁকা আছে শিম গাছ লাগিয়েছে। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানিতে অথবা শিশিরে ফুল ভিজে শিমের পঁচে যেত। কিন্তু বর্তমানে শিমের উন্নত জাতের উদ্ভাবনের কারণে ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ওই ধরনের সমস্যা নেই, এখন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই শিম চাষ করা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, এবার বাঁশখালী প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শিম উৎপাদনে কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় চাষিরা এতে আগ্রহ হচ্ছে। তা ছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস শিম চাষীদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি স্থানীয় শিমের জাত আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাইনতারা, হাতিকান, চ্যাপ্টা শিম, ধলা শিম, পুটি শিম, ঘৃত কাঞ্চন, সীতাকুন্ডু, নলডক ইত্যাদি। বারি শিম ১, বারি শিম ২, বিইউ শিম ৩, ইপসা শিম ১, ইপসা শিম ২, একস্ট্রা আর্লি, আইরেট ইত্যাদি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত। এই বার বাঁশখালী উপজেলায় এই জাত চাষ করায় কৃষকরা সাফল্য পেয়েছে।
কৃষকরা যাতে শিমের ন্যায্য মূল্য পায়, সে ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি













