২৯ অক্টোবর ২০২৫

বাঁশখালীর উপকূলজুড়ে আগাম তরমুজ চাষ, লাভ দেখছে কৃষকরা

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী »

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকুলীয় এলাকার চর অঞ্চলে ব্যাপক তরমুজ চাষ হয়েছে। অন্যান্য মৌসুমে তুলনায় এই মৌসুমে তরমুজের ভাল ফলন ও বাজার দাম বেশি থাকায় খুশিতে আত্মহারা উপকূলের কৃষকরা। মূলত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপকূলীয় চর অঞ্চলের এই মৌসুমে আগাম তরমুজ চাষে ভালো ফলন হয়েছে বলে মনে করেন কৃষকরা।

এদিকে তরমুজের ভাল ফলন ও বাজারদর বেশি হওয়ায় চাষিরা খুশি হলেও বছরের এই মৌসুমী ফলটি কিনতে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে বাড়তি দাম থাকলেও পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের সাধ্যের মধ্যে আকার বুঝে প্রিয় মৌসুমী ফলটি কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।

সরেজমিনে বাঁশখালী উপকূলের গণ্ডামারা, সরল, কাথরিয়া, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, সাধনপুর ও পুকুরিয়ার চর অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, টমেটো-মিষ্টি কুমড়া ও ক্ষীরা ক্ষেতের পাশাপাশি তরমুজ ক্ষেত। ছোট ছোট এই তরমুজ ক্ষেতগুলোর আয়তন দুই থেকে তিন বিঘা পর্যন্ত। প্রতিটি ক্ষেতের মাঝখানে তরমুজ গাছ এবং ক্ষেতের চারদিকে সারি সারি মিষ্টি কুমড়া, টমেটো ও শিম গাছ। প্রতিটি তরমুজ গাছে চার থেকে পাঁচটি তরমুজ দেখা যায়। যা দেখতে চকচকে ও সুন্দর। ক্রেতাদের কাছে এই তরমুজগুলো মিনি তরমুজ বা বাঁশখাইল্যা তরমুজ নামে পরিচিত।

এইসব চর অঞ্চলের মাটি শক্ত হওয়ায় তরমুজের আকার ছোট হয়। তবে আকার ছোট হলেও এসব তরমুজ যেমন লাল টুকটুকে তেমনি ভারী মিষ্টিও। মিষ্টি ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় শহরের মানুষের কাছে এসব তরমুজের চাহিদা আকাশচুম্বী। মূলত শুষ্ক মৌসুমে গ্রামীণ অঞ্চলের মসজিদ, মন্দির, মাহফিল, ঐতিহ্যবাহী মেলা বা গ্রামীণ খেলাধুলার আসরই এইসব তরমুজের প্রধান বাজার।

বাঁশখালী হালিয়াপাড়ার একটি মাজারের বার্ষিক ওরশের মেলায় গিয়ে দেখা যায়, শুষ্ক বিলে সারি সারি করে রাখা হয়েছে তরমুজ। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। এক থেকে দুই কেজি ওজনের প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া মাঝারি ও বড় সাইজের প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। তবে তরমুজের দাম বেশি হলেও ভারী মিষ্টি ও স্বাদের গুনে এইসব তরমুজ ক্রয় করছে ক্রেতা।

কাথরিয়া হালিয়া পাড়া চর অঞ্চলের তরমুজ চাষী ইরফানুর রহমান জানান, এই বছর আমি টমেটো, মিষ্টি কুমড়া ও ক্ষিরা ক্ষেতের পাশাপাশি ২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রথমে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে’র প্রভাবের বৃষ্টিতে কিছু কিছু ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। তবে এরপর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতের প্রতিটি গাছে ভরপুর ফুল আসে এবং তরমুজের ভাল ফলন হয়। মৌসুমের শুরুতে তরমুজের দাম কম থাকলেও এখন বাজারদর ভাল বলে জানান তিনি।

বাহারছড়া রত্নপুরের তরমুজ চাষী ইফতেখার বলেন, এই মৌসুমে বাড়ির পাশে লিজ নেওয়া ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করি। শুরুতে কিছু তরমুজ বড় হওয়ার আগে পচেঁ গেলে আমি ভয় পাই। এরপর বাঁশখালী কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কিছু পরামর্শ ও সার দেয়। পরামর্শগুলো মেনে চলার পর আমার ক্ষেতে তরমুজের ভাল ফলন হয়। এতে মোট ৩৫ হাজার টাকা খরচ হলেও বর্তমানে ৮০ হাজারেরও অধিক টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকার তরমুজগুলো অতিরিক্ত মিষ্টি ও স্বাদ হওয়ায় বাজারে এইসব তরমুজের চাহিদা বেশি। বর্তমানে বড় আকারের তরমুজগুলো ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, মাঝারি আকারের ২২০ টাকা থেকে শুরু করে ২৭০ টাকা এবং ছোট আকারের তরমুজগুলো ১৩০ টাকায় থেকে শুরু করে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক জানান, এই মৌসুমে বাঁশখালীর উপকূলজুড়ে ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। মূলত এইসব তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় এবং বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা এই তরমুজে চাষে ঝুকছেন।

মূলত, লবণাক্ত চর অঞ্চলে চাষ হওয়ায় এসব তরমুজ ভারী মিষ্টি ও লাল টুকটুকে হয়। তাছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস তরমুজের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে কৃষকদের সঙ্গে সব সময় মাঠে ছিলেন। তারা কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।

আরও পড়ুন