২৫ অক্টোবর ২০২৫

বাঁশখালীর সবুজের বুকে ‘সূর্যমুখী’র হাসি

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী »

হলুদ রঙের ফুল সূর্যমুখী। এই হলদে ফুলটি দেখতে কিছুটা সূর্যের মত। প্রতিদিন সকালে যখন আকাশে সূর্য উঠে, ঠিক তখন থেকে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে ফুলটি। এজন্য ফুলটিকে ডাকা হয় ‘সূর্যমুখী ফুল’। আবার সূর্যমুখী ফুল থেকে তৈরি হয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তেল। এই তেল আবার বিশ্বব্যাপী খ্যাতি। ফলে বিশ্বজুড়ে সূর্যমুখী তেলের ব্যাপক চাহিদা। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রথমবার চাষ করে সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর সুর্য ফুলের হাসিতে হাসছে বাঁশখালীর কৃষকরাও।

সূর্যমুখী একবর্ষী ফুলগাছ। ষাটের দশকে এদেশে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে এ ফুলটি প্রায় সব জেলায় চাষ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাঁশখালীতেও ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলটি। বাঁশখালীর গ্রাম বাংলার মেঠোপথ-ঘাট মাঠজুড়ে প্রকৃতিতে সূর্যমুখীর অসাধারণ এক রূপ মেলেছে। যেন সবুজের বুকে সূর্যমুখীর এক সূর্যহাসি। এই হাসি যেন কৃষকের হূদয় উৎসারিত বাঁধভাঙা হাসি, প্রাণের উচ্ছ্বাস। ফুটেছে সূর্যমুখী বাঁশখালীর সবুজ বুক চিড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ফুল্লহাসি দিগন্তজুড়ে। এ নবপ্রাণ বাঁশখালীর প্রকৃতিতে ও মনে। যেন মাটি ফুঁড়ে উঠেছে নবীন সূর্য সম্ভাবনা প্রত্যয়ে। কেনই বা হবে না বাঁশখালীর বুকে সবুজ জমিনে এই প্রথমবার জেগেছে প্রকৃতির অকৃত্রিম বন্ধু অসাধারণ এক রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী ফুল। যে ফুল পাগলপাড়া করে দিয়েছে তার রূপবৈচিত্র দিয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালিপুর, বৈলছড়ি, জলদি, চাম্বল, শিলকুপ, শেখেরখীল, সরল, পুইছড়িজুড়ে। শুধু সারি সারি মনকাড়া সুর্যমুখী ফুলের গাছ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। হলুদ রঙের হাজারো ফুল মুখ করে আছে সূর্যের দিকে। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই প্রথমবার চাষ করে সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর সুর্য ফুলের হাসিতে হাসছে বাঁশখালীর কৃষকরা। তা ছাড়াও এ ফুল দেখতে যেমন অদ্ভূত আকষর্ণীয়, তেমনি রয়েছে তার হাজারো গুনাগুণ। তাই কম খরচে বেশি লাভের আশায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বেড়েছে বাঁশখালী উপজেলার কৃষকদের।

আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ ভিড় করছেন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে। মনোরম সুন্দর পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না অনেকেই। সেইসঙ্গে সেলফি ও গ্রুপ ছবি তো আছেই। সবুজ মাঠের এই হলুদ রঙ ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা। একগুচ্ছ ফুলের সঙ্গে দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে যেন হাসছেন। দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে মুঠোফোনে বন্দী করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো। সূর্যমুখী ওই ফুলের বাগানের আশেপাশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরো দিনই বাড়ছে মানুষের সমাগম। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সূর্যমুখী ক্ষেত।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বাঁশখালীতে ১২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুল। বাগান জুড়ে ফুলের আবাদ হয়েছে ব্যাপক। মুলত উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় উপযুক্ত চাষাবাদের কারণে প্রথম চাষে বাম্পার ফলন ফেয়েছে কৃষকরা। ফুলে ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। তাই কম খরজে বেশি লাভের সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছে অনেক চার্ষী।

সুর্যমুখী ফুল চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, এই প্রথম উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। বলতে গেলে অনেকটাই শখের বশে এই চাষ করো। তবে বাম্পার ফলনের আশা করছি। তবে এ চাষে স্বল্প ব্যায়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়, যার কারনে আগামী দিনে আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করবো।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, দেশীয় ঘানি ব্যবহার করে পরিপক্ক সূর্যমুখী ফুলের বীজ থকে তেল ভাঙানো যায়। এই তেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম। তাছাড়া এইবার বাঁশখালীতে বারি সূর্যমুখী-৩ চাষ করা হয়েছে। এটি গাছের উচ্চতা ৭৫-৮০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ১০০০ বীজের ওজন ৬৫-৮৭ গ্রাম হয়। প্রতি মাথায় বীজের সংখ্যা ৪১০-৮২৯টি। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৩৮-৪০ শতাংশ। সূর্যমুখী গাছের জীবনকাল ৯০-১০৫ দিন। শতকরা ৮০-৯০ শতাংশ বীজ পরিপক্ক হলে ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হয়ে যায়। প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সূর্যমুখী সারিতে বপন করতে হয়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার রাখতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আরোও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী দিনে উপজেলার অন্যান্য এলাকায় যাতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা যায়, সে জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষে থেকে কৃষকদের বীজ, সারসহ প্রযুক্তিগত সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন