ঋতু অনুসারে ভাদ্র-অশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে চোখে পড়ে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি। প্রতিবছরের মতো নিয়ম করে বাংলায় শরৎ এসেছে। কাশফুলও ফুটেছে। তবে গ্রামীণ জনপদ থেকে দিন দিন জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাশবন। একটার সঙ্গে আরেকটা কাশফুলের দোল দেখে মনের অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো। সেগুলো আর চোখে পড়ছে না।
শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই প্রকৃতি। শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। শরতের এই অপরূপ রূপ দেখে কবি জীবনানন্দ দাশ অবলীলায় লিখেছেন, “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।” তিনি শরৎকে দেখেছেন, শরতের কাশবনে পৃথিবীর মায়াভরা রূপ দেখতে পেয়েছিলেন।
নদীমার্তৃক দেশের নদীর তীরগুলো ঘেঁষে কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ আর বাতাসে দোল খাওয়া সে অপরূপ দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলেই নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেরে ওঠে। তবে এবার একটু দেরিতেই কাশফুল ফুটতে দেখা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরসভার চরখিদিরপুর এলাকায় কর্ণফুলি নদীর পাড় ঘেঁষে একচিলতে জায়গা জুড়ে দেখা গেছে সাদা কাশফুলের প্রস্ফুটিত রূপ-লাবণ্য, যা প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অনন্য রূপে। এসময় কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে রুম্পা বড়ুয়া ও শিমলা বড়ুয়া নামের দুই শিক্ষার্থী বলেন, কাশবনের নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ হওয়ার সময় যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
এখন গ্রামবাংলায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে নানা মিলকারখানা ও মৌসুমী ফসলের ক্ষেত। যার কারণে ঋতুর রাণী শরতের সৌন্দর্যকে উপভোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ষড়ঋতুর দেশে শরৎ ঋতু আমাদের কাছে রয়ে যাচ্ছে যেন অনাদৃতই। সাধারণ মানুষের বিনোদন-প্রকৃতিতে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। কাশবন রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো আতিক উল্লাহ বলেন, কাশ ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। এ উদ্ভিদটি সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি জন্মাতে দেখা যায়। আপনা থেকে কাশবনের সৃষ্টি হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন করে। কাশবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য টিকিয়ে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।













