কক্সবাজার প্রতিনিধি »
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বাংলা চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়লো ১০ বছর ৪মাস বসয়ী সৈয়দা লারিসা রোজেন। সে রাজধানী ঢাকার এক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। লারিসাসহ এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন ৭৯ সাঁতারু। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্র সৈকত থেকে সাঁতার শুরু করেন তারা।
কিশোরী লারিসার সঙ্গে সাঁতারে অংশ নিয়েছেন তার বাবা সৈয়দ আক্তারুজ্জামান ও বড় ভাই সৈয়দ আরবিন আয়ান। দুই সন্তানের সঙ্গে অংশ নিয়ে বাংলা চ্যানেলে সাঁতারে উদ্ধারকারি ছিলেন তাদের মা। মাঝপথে দু’ভাইবোন ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধে ব্যর্থ হলে উদ্ধারকারীরা তাদের তুলে নেয়।
সাঁতার শুরুর আগে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়, কেমন লাগছে.? জবাবে লারিসা বলে,একটু ভয় ভয় করছে। তবে, আশা করছি আমি পারবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

‘ফরচুন বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২১’ স্লোগানে বাংলা চ্যানেল সাঁতারের আয়োজন করেছে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার ও এক্সট্রিম বাংলা। এবারের ৭৯ জন সাঁতারু-এর মাঝে একজন ফ্রান্সের নাগরিক ও এক নারী রয়েছেন। সাঁতরে ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিনে পাড়ি জমান তারা। এ সময় দ্বীপের বাসিন্দারা তাদেরকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
দ্বীপের বাসিন্দারা ও আয়োজকরা জানায়, বেলা ১১টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বাংলা চ্যানেলে সাঁতার শুরু করার আগে ৭৯ সাঁতারু দেশের পতাকা দেখিয়ে উল্লাস করেন। বেলা ২ টা ৩০ মিনিটে (৪ ঘন্টা ৯ মি.) বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দ্বীপে প্রথম পৌঁছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রাসেল। তিনি ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। সবচেয়ে কম সময়ে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার গৌরবও অর্জন করেন। এর আগে গত বছর সাইফুল ইসলাম রাসেল দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এবারে ৩ ঘন্টা ১৬ মিনিটে পাড়ি দিয়ে তৃতীয় হয়েছেন সালা উদ্দিন। এরপর সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গেই ধাপে ধাপে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৭৪ জন সাঁতরু দ্বীপে পৌঁছান। বাকিদেট মধ্যে যারা মাঝপথে সাঁতারে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের কয়েকজন সাঁতরুকে উদ্ধারকারীরা তুলে নেয়।
এবার ১৮ তম বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড গড়েন ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার।

তিনি সাঁতার শুরুর আগে বলেছেন, চ্যানেল সাঁতারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আয়োজন করা হয়েছে। সাঁতারুরা ফ্রি হ্যান্ড সুইমিং করবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক সাঁতারুর সঙ্গে একটি করে উদ্ধারকারী ছিল।
লিপটন সরকার আরো জানান, এবার সর্বোচ্চ ৭৯ জন সাঁতারু অংশ নেন। গত বছর ৪৩ জন সাঁতারু অংশ নিয়েছিল। আমরা বাংলা চ্যানেল সাঁতারকে আন্তর্জাতিক করতে পেরেছি। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ সাঁতারুর অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশে দূরপাল্লার সাঁতার জনপ্রিয় হচ্ছে।
দ্বীপে পৌঁছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সালা উদ্দিন বলেন, মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে, মনে হচ্ছে আমি ‘বিশ্বজয়’ করেছি। আমার টার্গেট ছিল যেকোন মূল্যে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে জয়ের স্বাদ নিব। আল্লাহ আমার সেই আশা পূরণ করেছেন। আমি সূর্য ডুবির অনেক আগে দ্বীপে পৌছেছি। এছাড়া অনেক সহকর্মী সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গেই পৌছেন। আগামীতে আরও বড় বড় অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নিতে চাই। এজন্য সরকার ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয়া নিয়ে একটা উৎসবের আমেজ বয়ে যায় সোমবার। উৎসুক জনতা সাঁতারুদের অপেক্ষায় তীরে অপেক্ষা করে। এক কিশোরী সাঁতারুকে নিয়ে সবার আগ্রহ বেশি কাজ করেছে। এমন দুঃসাহসিক কাজ করা মেয়েটিকে দেখতেই সববয়সীদের ভীড় জমে বালুচরে। রাসেল নামে একজন প্রথমে দ্বীপে পৌঁছান। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে ক্রমে সকল তীরে উঠেন।













