আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন রকমারি ফল উদ্ভব হলেও কিছু ফলের মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয়তা। সেই ফল সারা বছর পাওয়া না গেলেও বছরে শেষের দিকে একবার বাজারে আসে বিক্রির জন্য। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ফরমালিন মুক্ত সবজি থেকে শুরু করে যেন নানান রকমারি নতুন জন্মে পাহাড়ের পাদদেশে। আবাহাওয়া প্রতিকুলে পরিবেশে অবস্থায় থাকায় চাষ হয়েছে পাহাড়ে পাহাড়ে।
এমনই একটি ফলের নাম ঠাণ্ডা আলু। মিষ্টি স্বাদের, দেখতে গায়ের সাদা বাদামি বর্ণের লম্বা ও গোলাকৃতি। এই ফলটি চামড়া পাতলা খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা কিংবা রান্না করেও খাওয়া যায়। মারমাদের ভাষায় এই ফলটি নাম ‘রোয়াই উ’। আর বাংলা ভাষার ‘ঠাণ্ডা আলু’ নামে পরিচিত। যেটি ইংরেজিতে ম্যাক্সিকান ইয়াম বা ম্যাক্সিকান টার্নিপ বলা হয়।
জানা যায়, একমাত্র পাহাড়ে পাদদেশে জুমের চাষাবাদে এই আলু চাষ করে থাকেন। জুমের নতুন ধানের বীজ রোপন করার সময় জুমের বীজ সাথে ঠাণ্ডা আলু বীজ বপন করা হয়। ধান উঠে গেলে আলুর গাছগুলো বাড়তে থাকে। নিয়ম অনুসারে এপ্রিল মাস থেকে জুম চাষের প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস পর্যন্ত সাধারণ ঠাণ্ডা আলুর মৌসুম। মূলত এই ফলের চাষ তিন পার্বত্য জেলায় জুমে চাষ হয়। আবার কিছু কিছু জায়গায় জমিতে চাষ করা হয়। এই ফলের ভিতরে রয়েছে ভিটামিন সি ও প্রচুর আয়োডিন। এ ফলটি শিতকালে বছর শেষের দিকে বাজারে আসে। ফলে শুরুতে বাজার দাম থাকে বেশ দ্বিগুন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোয়াংছড়ি ডুলুপাড়া চড়ুই পাড়া বাঘমারাসহ বিভিন্ন জুমের পাহাড়ের শুরু হয়েছে ঠাণ্ডা আলু ফল উত্তোলন। এতে বেশ হাসিখুশি মনে জুমের বাগান হতে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছে জুমায়িরা। আবার কিছু জুমের বাগানে ফলন মোটা তাজাকরণ হওয়ার কারণে চার থেকে পাঁচ আটি বেঁধে পাঠাচ্ছে বাজারে। সেই ফল বাজারে আসতে শুরু করলে খুচরা বিক্রেতারা জড়ো হচ্ছে ফলটি কিনতে। নির্দ্দিষ্ট দামে ফলটি কিনে শুরু হয়ে যায় বস্তার মধ্যে প্যাকিং জাতকরণ। ঠাণ্ডা আলু ফলগুলোকে খুচরা বিক্রেতারা কিনে কক্সবাজার সাতকানিয়া চট্টগ্রামসহ রাজধানীতেও বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে গাড়ি করে।
এইদিকে বান্দরবান শহরে বাজারগুলোতে দেখা মিলে এই ঠান্ডা আলু ফলটি। মগ বাজার, বালাঘাটা বাজার, কালাঘাটা বাজারসহ ছোট খাটো বাজারগুলোতে বেশ জমে উঠেছে এই ফল বিক্রি। ক্রেতারা ভীড় করে দুই হতে তিন আটি ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। বাজারের শুরুতেই এই ফলের দাম প্রতি কেজি ১০০-১৫০ টাকা। মধ্যখানে বাজারের দর থাকে ৭০-৮০ টাকা। কিন্তু শেষ সময় বাজারে ৫০ টাকা নিচে পাওয়া যায় নাহ। সর্বোচ্চ দামের মধ্যে এই ফলের বাজারের দর থাকে ১৫০ টাকা শেষ সময় ও ৫০ টাকা। তবে তিন পার্বত্য জেলায় রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠি পাশাপাশি বাঙ্গালিদের কাছে ও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
জানা যায়, জুমের নতুন ধানের বীজ রোপন করার সময় জুমের বীজ সাথে ঠান্ডা আলু বীজ রোপনে শুরু হয়। এপ্রিল মাস হতে প্রক্রিয়াভাবে শুরু হয় বীজ রোপনের কাজ। মাটি উর্বরতা ঠিক থাকলে বীজ গুলো হতে চারা বের হতে শক্তি জোগান পায়। আবার হালকা ভিজে মাটি হলে ফল্টি বড় আকারে ধারণ করে। বীজ রোপনে সময় কোন রাসায়নিক ব্যবহার না করে ফলটি মাটি যোগান পেয়ে উঠে যায়। আবার এই বিজ গুলো পাথরে থাকলে ফলগুলো লম্বা হয়। ভিজে মাটি উপর বিজ রোপন করলে মোটা ও গোল আকারে ধারণ করে মিষ্টি স্বাধে হয়। ফলটি শুরুতে বাজারে আসে ডিসেম্বর মাস হতে। ডিসেম্বর হতে ফেব্রুয়ারী এই তিন মাস পর্যন্ত বাজার বিক্রি জন্য এসে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন হয়।

বাজারের বিক্রি করতে আসা লালু তংচগ্যা বলন, আমরা জুম চাষ শুরুতে বীজগুলো রোপন করি। কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়া ফলগুলো উদপাদন হয়। জুম থেকে তুলে বিক্রি করতে এসেছি। দাম শুরুতেই বেশি হলেও সবাই এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
মগ বাজারে বিক্রেতা থুইবু চিং মারমা জানান, তিন থেকে চার মাস বিজ সংরক্ষণ করে জুমে শুরুতেই রোপন করি। এখন বাজারের প্রতি কেজি বিক্রি করছি ৯০ টাকা করে। ঠাণ্ডা আলু ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে সবাই। আবার খুচরা বিক্রেতাও এক সাথে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে লাভ মোটামোটি পাচ্ছি।
খুচরা বিক্রেতা জুবায়েদ ইসলাম জানান, ঠাণ্ডা আলু ফলগুলো বাজারে আসলে আমরা ১০ হতে ১২ কিনে নিয়ে যায়। এই ফল গুলো কিনে আমরা কক্সবাজার কেরানিহাট চট্টগ্রামসহ রাজধানীতে বিক্রি করি। বান্দরবান জেলা ছাড়া রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। পরিবহন খরচ বাদে আমাদের লাভ হয়।
এ ব্যাপারে বান্দরবান কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানিয়েছেন, পাহাড়ে জুমিয়াদের জুম চাষের সময় ধান ও বিভিন্ন রকমারি ফলজ পাশাপাশি ঠাণ্ডা আলুর বীজ বপন করেন। ওই জমিতে ধান ওঠে গেলে ঠাণ্ডা আলুর গাছগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এক পর্যায়ে আলু বড় হলে গাছের গোড়ার মাটি ফেটে যায়। তখন ঠাণ্ডা আলু সংগ্রহ করতে থাকেন। তবে মাঝারি ঢালু পাহাড়ি জমিতে ঠাণ্ডা আলুর ফলন ভালো হয়। জুমের মাটিতে ঠাণ্ডা আলুর চাষের জন্য কৃষি বিভাগ হতেই সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।













