২৯ অক্টোবর ২০২৫

বান্দরবানে দুই স্কুল ছাত্রাবাস বন্ধ, পড়ালেখা অনিশ্চিত ৪২ শিক্ষার্থীর

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান » 

দীর্ঘ দুই বছর পর করোনা নিয়ন্ত্রণ আসায় চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ের ক্লাস। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দুই মাস পরেও খুলেনি বান্দরবানের দুই প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস। প্রতিনিয়ত ক্লাস চললেও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা ৪২ শিক্ষার্থী আবাসিক ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। যতায়াত কষ্টকর হওয়ায় স্কুলে আসতে না পেরে কেউ পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে পরিবারে হাল ধরছে আবার কেউ নিম্ন ক্লাসে গিয়ে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু কেন এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবাসিক খুলছে না— সেই প্রশ্ন শিক্ষার্থীর ও অভিভাবকদের।

জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস করোনা পর থেকে এখনো পর্যন্ত খোলা হয়নি। কারণ কোন বরাদ্ধ না থাকায় এখনো বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাস। অন্যদিকে আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাসের ও একই রুপ। সেখানে কোন বরাদ্ধ না দেওয়া কারণে বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন। তাতে দুর্ভোগ ও পড়ালেখা থেকে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসা সেসব শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান পৌর শহরে বালাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান চললেও এখনো খুলেনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস। এতে দুর্গম এলাকার থেকে ৫ম শ্রেনীর পড়ুয়া ১৮ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেনি। অন্যদিকে একইভাবে আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করোনা পর বিদ্যালয়েয় আসেনি ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া ২৪ শিক্ষার্থী। প্রত্যন্ত এলাকার থেকে আসার শিক্ষার্থীদের একমাত্র সম্বল আবাসিক ছাত্রাবাস। সে ছাত্রাবাস না খোলাতেই পড়ালেখা ছেড়ে পরিবার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন সেই ৪২ শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা নিয়ন্ত্রণের থাকার পরও খুলেনি বান্দরবানে জেলার ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস। এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পাঠদান চললেও সেই প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস খুলে না দেওয়াতে ৪২ ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাস বন্ধ থাকাতেই কেউ কেউ এখন লেখাপড়া বাদ দিয়েছে। কেউ বই নিয়ে গিয়ে অন্য বিদ্যালয়ের নিম্ন ক্লাসে গিয়ে ভর্তি হয়েছে। আবার কেউ কেউ পড়ালেখা করতে না পেরে পরিবারের হাল ধরে মা-বাবার সাথে জুম চাষসহ নানান কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। যদিও কিছুদিন পর সেই শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা।

এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানিয়েছেন, আবাসিক খুলে না দিলে সন্তাদের আর লেখা পড়া করানো সম্ভব না। কারণ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাস। তাই সেসব গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রাবাস বন্ধ থাকাতেই তাদের মতো জুম চাষ করেই বাকি জীবন অতিবাহিত করতে হবে বলে জানান এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবক।

বালাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রণির শিক্ষার্থী লাল হোম সাং বম বলেন, ছাত্রাবাস খুলে না দেওয়ার কারণে প্রতিদিন ৭ কিলোমিটার রাস্তা হেটে বিদ্যালয়ের আসি। প্রতিদিন ১শ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে কষ্ট করে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। আবাসিক খুলে দিলে খুব ভালো হতো।

এ ব্যাপারে আলীকদম আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আপ্রুমং ও বালাঘাটা উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাসে তত্ত্বধায়ক মংক্যচিং মারমা জানিয়েছেন, করোনা পর থেকে আবাসিক হল বন্ধ। সে কারণে দূর-দূরান্তের ৪২ শিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়ে আসেনি। তবে আবাসিক খোলার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট জানানো হয়েছে।

রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা প্রফুমক পাড়া শিক্ষার্থী সাইনিয়া খুমী জানিয়েছেন, বান্দরবান শহরে বালাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাসে উঠে ছিলেন। হঠাৎ করোনা মহামারির কারণে ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দিলে বাড়িতে গিয়ে আর স্কুলে ফিরে আসেনি। বর্তমানে বাবা-মা’র সাথে জুমে কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল আলমের সাথে। তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চাহিদা প্রেরণ করে আবাসিক ছাত্রাবাস দুটি খুলে দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলেও এখনো অধিদপ্তর থেকে কোন লিখিত নির্দেশ পায়নি। তবে লিখিত পেলে অতি দ্রুত আবাসিক ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ ধরেননি।

আরও পড়ুন