আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
কয়েকদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে মারমা জনগোষ্ঠীর তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাই মৈত্রীবর্ষণ। সেই উৎসব আমেজকে ঘিরে বান্দরবান শহরের মর্কেটগুলোতে কেনাকাটায় ধুম পড়েছে ক্রেতাদের। দোনিরাও ক্রেতাদের চাহিদা মতন পণ্য দেখাচ্ছে একটি পর একটি। দাম দর সঠিক হলে ভিন্ন ধরনের কাপড় ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। এতে হাসিমুখে আনন্দময় ঘনমুহূর্ত দেখা গেছে সবার মুখে।
জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনা প্রাদুর্ভাব ও সরকারি নির্দেশনার লকডাউনে কারণে দু’বছর আনন্দ করতে পারেনি মারমা সম্প্রাদায়ের জনগোষ্ঠী। লকডাউনে সীমিত আকারে অনুষ্ঠানে করা হলেও তাতেও কোন আনন্দ পায়নি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা। সেটি প্রহর গুনে প্রায় দীর্ঘ ২ বছর অপেক্ষা পর ১৪ এপ্রিল শুরুতে হতে যাচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব সাংগ্রাই মৈত্রীবর্ষণ। এরই উৎসব আমেজকে ঘিরে শুরু হয়েছে বাজারের কেনাকাটা, সাজসজ্জা, এমনকি ধর্মীয় ব্যবহারে প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক। কেউ বা নানান রকমারি শাকসবজি, ফুলফল ও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের প্রয়োজনীয় মতন। যাতে করে অতিথি নিজ বাড়িতে আগমন ঘটলে কোন ঘাটতি না পড়ে।
কথা হয় বাজার করতে আসা উম্যানু মারমা সাথে। তিনি বলেন, ১৪ তারিখ আমাদের সাংগ্রাই উৎসব। তাই আগে থেকে বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করে নিয়ে যাচ্ছি। সাংগ্রাই তিনদিনের জন্য ছোয়াইং রান্না, সেমাই ইত্যাদি তৈরি করে বিহারে তুলব তাই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান শহরের মার্কেটগুলোতে বিভিন্ন লোকালয় থেকে সাধারণ মানুষের আগমন ঘটেছে পুরো বাজারজুড়ে। অনেকে তালিকা করে ব্যাগ ভর্তি বাজার করছে উৎফুল্ল মনে। শহরের বার্মিজ মার্কেট, হ্লাহ্লা বার্মিজ মার্কেট, হক টাওয়ার, চৌধুরী মার্কেট, কেএসপ্রু মার্কেটসহ সব স্থানে ছোট বড়, কিংবা পরিবার নিয়ে ক্রেতাদের ভরপুর। নিজের পোষণ ও চাহিদা মেটাতে ক্রয় করছে থামি, লুঙ্গি, শার্ট, পেন্টসহ অনান্য কাপড়। মারমাদের মতে বছর ঘুরে একবার আসে আনন্দময় সাংগ্রাই জলকেলি উৎসব।
বার্মিজ মার্কেটে থামি কিনতে আসা মুইক্রাচিং মারমা জানান, গত দুই বছর সাংগ্রাই উৎসবের আনন্দ করতে পারিনি। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের জন্য ঘরবন্দি ছিলাম। এবছর করোনা প্রাদুর্ভাব না থাকায় পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে আনন্দ মুহূর্ত ভাগাভাগি করতে পারবো। তাই এইবারে ৪টি থামি কিনেছি ভিন্ন রঙের।
হ্লাহ্লা বার্মিজ মার্কেটে বিক্রেতা উসাইসাই রাখাইন বলেন, এইবার সাংগ্রাইতে মানুষজন থামি, গেঞ্জি, শার্ট ইত্যাদি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ৩-৪ টি থামিও কিনেছে। সামনে সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে গত বছর তুলনায় এই বছরে বিক্রি ভালো হচ্ছে।
অন্যদিকে শহরে বাইরে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা, চাকরিজীবীসহ নানা পেশার মানুষ ছুটে আসছে নিজ গ্রামে। ঝাঁকজমকভাবে উৎসব উপভোগ করতে দূর থেকে পাড়ি দিয়ে আসছেন যে যার এলাকায়। এইবারে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব সাথে ভাগাভাগী করে আনন্দমুহূর্ত কাটার জন্য ছুটে আসছে তারা।
ঢাকা অবস্থানরত চাকরিজীবী নুমংসিং মারমা জানান, গত দুই বছরের করোনা কারণে বাড়িতে আসতে পারিনি, সাংগ্রাই উৎসবও করতে পারি। কিন্তু এবারে ছুটি নিয়েছি ৭ দিন। শুধু সাংগ্রাই সময় পানি খেলা খেলব আর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরাঘুরি করব। এই দিনটি জন্য অনেক অপেক্ষায় ছিলাম।
উৎসব উদযাপন কমিটির তথ্যমতে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছোয়াং দান, বুদ্ধ স্নান, শীলগ্রহণ ইত্যাদি আর সামাজিক অনুষ্ঠান মৈত্রী পানি বর্ষণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মিনি ম্যারাথন দৌড় এবং পাহাড়িদের ঐতিহ্য খেলাধুলাসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। পাশপাশি অনুষ্ঠান শুরুতেই ১৩ তারিখ সকালে বিভিন্ন গ্রামে মঙ্গলময় শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু করা হবে বলে জানা যায়।
বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, পার্বত্য এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৈসাবী, বিজু ও সাংগ্রাই আসছে। প্রায় তিনদিন এই উৎসবকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে। যাতে সবাই নির্বিঘ্নে উৎসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে ও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।













