বাংলাধারা ডেস্ক »
সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার স্ত্রী মাহমুদা খানমকে খুনের জন্য আগেও বেশ কয়েকবার পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য নিজের অফিসে সোর্স (তথ্যদাতা) কামরুল শিকদার প্রকাশ মুসাকে ডেকে মিতু হত্যার সব পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন।
মঙ্গলবার (২ মে) বিকেলে তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আংশিক জেরা করেন। আদালত জেরা মুলতবি রেখে আগামী ৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ বলেন, আজ দুপুরে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বিকেলে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সবমিলিয়ে দুই দফায় তার সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। এরপর জেরা শুরু হয়। আজকের সাক্ষ্যতে কেন মিতু খুনের পরিকল্পনা নেয়া হয়, কীভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় এবং হত্যা পরবর্তী সময়ে বাবুল আক্তারের চালচলনসহ যাবতীয় বিষয় ওঠে আসে।
আদালতে সাক্ষ্যদানকালে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, বাবুল আক্তার দুনিয়া থেকে মিতুকে বিদায় দেবেন ও হত্যা করবেন এই পরিকল্পনা করতে থাকেন। বাবুল আক্তারের বাসায় সাদ্দাম নামে এক কনস্টেবল থাকতেন। সে মাহিরকে স্কুলের বাসে নিয়ে যেতেন ও নিয়ে আসতেন। বাসায় জঙ্গি হামলা হতে পারে, এরকম পৃথক রেজিস্ট্রার তার বাসার জন্য করতে বলা হয়েছে বাসার দারোয়ানকে। বাসার বিপরীতে একটি চায়ের দোকানে ছিল। মিতুকে হত্যা করার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে চাকরি করার সময় বাবুল আক্তারের অফিসে সোর্স (তথ্যদাতা) মুসাকে ডেকে মিতুকে হত্যার সব পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন। এছাড়াও নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালের গলিতে মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মুসা বাবুল আক্তারের সঙ্গে যৌথ অস্ত্র ক্রয় করার জন্য টাকা দাবি করে। তখন বাবুল আক্তার মুসাকে নগদ ৭০ হাজার টাকা দেয়। বাকি তিন লাখ টাকা তার বন্ধু সাইফুল ইসলাম তাকে দেবে বলে জানায়।
এদিকে আজ আদালতে মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতের ভেতরে তাকে দেখতে আসেন বাবুল আক্তারের বর্তমান স্ত্রী মুক্তা। সঙ্গে আসেন বাবুলের ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির ও মেয়ে টাপুর। এ সময় ছেলে-মেয়েদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন বাবুল।
কান্না করে আদালতকে বাবুল আক্তার বলেন, আমার স্ত্রী ও ছেলে অনেকদিন পর দেখা করতে আসছেন। পুলিশ কথা বলতে দিচ্ছেন না। পরে আদালত বাবুল আক্তারকে স্ত্রী-ছেলের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।
এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলা তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।













