২৩ অক্টোবর ২০২৫

বায়েজিদে দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার আরও ১১ হাজার কুকি-চিন ইউনিফর্ম

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় দ্বিতীয় দফায় আজ ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে আরও ১১ হাজার ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছে পুলিশ, যেগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর জন্য তৈরি করা হচ্ছিল।

এর আগে গত ১৭ মে রাতে একই এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানা থেকে ২০ হাজার ৩০০টি ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশের এই অভিযান ও জব্দের বিষয়টি ঘটনার সাত দিন পর জনসমক্ষে আসে। এ নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযানকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলামসহ তিনজনকে। অপর দু’জন হলেন—গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার, যারা ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার এনেছিলেন।

পুলিশ জানায়, ১৮ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চারজনকে আসামি করে বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন মামলার বাদী। চতুর্থ আসামি রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মংহ্লাসিং মারমা (৩৭), যিনি কেএনএফ সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

মামলায় বলা হয়, মার্চ মাসে ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ইউনিফর্ম তৈরির কাজ নেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। অর্থদাতা ছিলেন মংহ্লাসিং মারমা ও তার সহযোগীরা, যারা কাপড় সরবরাহ করেন এবং ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার দেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩১ হাজার ৩০০ ইউনিফর্ম উদ্ধার কেএনএফ-এর সদস্যসংখ্যা, অর্থায়নের উৎস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, “প্রতি সদস্যের জন্য গড়ে দুটি ইউনিফর্ম ধরলে কেএনএফ-এর সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৫ হাজার। এটি কেবল একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রস্তুতি নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত। কেউ না কেউ তাদের বড় অর্থায়ন করছে।”

সেনাবাহিনী বলছে, বিষয়টি তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম উদ দৌল্লাহ বলেন, “পুরো বম জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১০-১২ হাজার। তাহলে ৩১ হাজার পোশাক কোথা থেকে, কেন—তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।”

এদিকে পোশাক কারখানার কর্মীরা জানান, মার্চ মাস থেকেই ইউনিফর্ম তৈরির কাজ চলছিল। তারা বলেন, “আমরা অর্ডার পেয়েছি, কাপড় পেয়েছি, সেলাই করেছি। এগুলো কারা নিচ্ছে বা কোথায় যাচ্ছে, সে খোঁজ আমরা রাখিনি।”

বায়েজিদ ওসি মো. কামরুজ্জামান কিংবা ডিবি পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দেয়নি, যা নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা রয়েছে।

সচেতন মহল বলছে, কুকি-চিনের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য এত বিপুল ইউনিফর্ম তৈরি হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুন