শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত»
প্রস্থানের পৃষ্ঠার পাতা যতই উল্টানো হোক কিংবা যতই গভীরে যাওয়া হোক, সেখানে বেদনার রঙটা শুধু গাঢ় হতেই থাকে। সেদিন বেদনায় জমে থাকা কষ্টের নীর গুলো ঝরেছে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতায়।
নূ-ক্যাম্পের বিশাল আবরণে দূরন্ত কৈশোর কিংবা যৌবনের যে বেলা গুলো কেটেছে সেগুলো বড্ড বেশী ঝলমলে ছিলো মেসির জীবনে ঠিক দিপ্রহরের সূর্যের মতো।
গ্রহের আর্বতনে সূর্যের আলো যদি এপারে আসে ওপারটা অন্ধকার হবেই। কিন্তু সূর্যের বিকিরণ চলতে থাকে গ্রহের সব প্রান্তে।
স্পেনের ‘পিরিনীয়’ পর্বতের ওপারে পিএসজির “পার্ক দেস প্রিন্সেস” আরে এপারই কাতালানদের “নূ-ক্যাম্প”। বার্সালোনা থেকে লিওনেল মেসি দুইটি বছর কাটাবেন ৮৩১ কিলোমিটার দূরত্বে, ফ্রান্সের প্যারিসে।
যে ঘর থেকে বার্সালোনায় মেসির বিশ্বসেরা হওয়ার যাত্রা, সে ঘরটা আজ বড্ড বেশী ফাঁকা। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ খুব করে বলেছিলেন, আনন্দকে ভাগ করলে দুটি জিনিস পাওয়া যায়; একটি হচ্ছে জ্ঞান এবং অপরটি হচ্ছে প্রেম। কাতালানরা তাদের ফুটবলের সে আনন্দকে ভাগ করে নিয়েছে প্রেম এবং স্বাধীনতার বাহক হিসেবে। কেননা তারাই বলেছে বার্সোলনা “ইজ এ্য মোর দ্যান এ ক্লাব”।
আঠারো শতাব্দীর একদম শেষ দিকে সৃষ্টি হওয়া একটি ফুটবল ক্লাবটি কীভাবে বিংশ শতাব্দীতে এসে কাতালানদের জাতীয়তাবাদের প্রতীক কিংবা স্বাধীনতার মূল উপজীব্য বাহক হয়ে উঠেছে সেটির সম্ভবত হিস্টোরিক উদাহরণ এই বার্সালোনা কিংবা ব্রাউগ্লানা।
দিয়োগো ম্যারাডোনা,রোমারিও,রোনালদো,পেপ গার্দিওলা,হোসে মারি বাকেরো,জিকি বেগিরিস্তেইনেরা খেলছেন বার্সার জার্সি গায়ে,মাতিয়েছেন নূ-ক্যাম্প।
স্পেন থেকে আলাদা হয়ে স্বায়ত্বশাসনের স্বপ্নে বিভোর কাতালুনীয়ানদের কাছে মাদ্রিদ যেন খাঁ খাঁ মরুভূমির রৌদ্রতাপের মতো। সে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সার ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী রোনালদিয়োর প্রতি মাদ্রিদ সমর্থকদের দাড়িয়ে সম্মান জানানোটা ছিলো মরুভূমিতে শ্রাবণ ধারার মতো। এর পরের গল্পটা শুধু অন্যরকম অনন্য,লিও মেসির বাঁ পায়ের ছন্দের জন্য। কেননা মেসির ২১ টি বছরে বার্সার ইতিহাসে ছেয়ে গেছে রেকর্ডের আঁলপনায়, ছয় বার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর আর জালে জড়িয়েছেন ৬৭২ গোল। যেটি এই যাবৎকালের নয় বরং সর্বকালের সর্বসেরা। জিতেছেন সাতটি কোপা ডেল রে, দশটি লীগ শিরোপা এবং চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ।
বার্সা যদি কাতালানাদের স্বাধীনতা হয়ে থাকে মেসিকে সে স্বাধীনতার অনেকগুলোকে মহানায়কের মধ্যে একজন মহানায়ক বিশেষণে ব্যাখা করাই যায়। আর সে মহানায়কের বিদায়ে বাঁধভাঙ্গা কান্না কিংবা তীব্র যন্ত্রণা বুকে ভর করবেই এমনটাই যেন খুব স্বাভাবিক।
আবারো কাতালানারা “এলস সেগাদরস” সঙ্গীতে জয়ের আনন্দে মাতবে, ফুটবলে তাদের স্বাধীনতার কথা বলতেই থাকবে। তবে মেসি কি আবার ও ফিরবে তার ঘর নূ-ক্যাম্পে? ফিরে আসুক বা নাই আসুক কিংবা যে প্রান্তে থাকুক বার্সোলনার মতো মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে মেসির ফুটবল ছন্দ চলতে থাকুক।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













