ফটিকছড়ির বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদী ও খালগুলো যেন এখন ‘সোনার খনি’। তবে এই খনির মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে নয়, কিছু প্রভাবশালী বালুখেকোদের হাতে। প্রকাশ্যে পাইপলাইন বসিয়ে ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলছে বালু লুট। প্রশাসনের নীরবতা, রাজনৈতিক ছত্রছায়া আর দুর্বল নজরদারির সুযোগে দিনে-দুপুরেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী স্থাপনা, কৃষিজমি আর বসতবাড়ি।
জানা গেছে, উপজেলায় ইজারাকৃত বালুমহালের সংখ্যা আনুমানিক ২০টি। তবে এর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ড্রেজার মেশিন ব্যবহারসহ নানা অনিয়মে চলছে উত্তোলন কার্যক্রম। যেখানে ইজারার শর্তে স্পষ্টভাবে ড্রেজার নিষিদ্ধ, সেখানেই ড্রেজারই হয়ে উঠেছে প্রধান অস্ত্র। নদী-খালের গভীর থেকে পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচের বালু তুলছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
বালু তোলার নামে চলছে জনপদের ধ্বংস
এই বেপরোয়া উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে ধুরুং খাল, সর্তা খাল, লেলাং খাল, গজারিয়া খাল, রুপাই খাল, বারমাসিয়া খাল ও হালদা নদী। নদী-খাল ভাঙনের মুখে ফেলে দিয়েছে পাড়ের মানুষদের। আতঙ্কে বসতভিটা ছেড়ে পালাচ্ছে কেউ কেউ, আবার কেউ উঠান বৈঠক করে রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছে নিজ এলাকা।
সুন্দরপুর ইউনিয়নের একটি ঘটনার কথা উঠে এসেছে—নৌকা নিয়ে আসা একদল দুষ্কৃতিকারীকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে এলাকাবাসী। খিরাম ইউনিয়নে স্থানীয়রা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন সর্তা খালের পাড়ে।
বালু নিয়ে রাজনৈতিক কোন্দল
এই অবৈধ বালু ব্যবসা থেমে নেই কেবল ভৌগোলিক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে। ছড়িয়ে পড়েছে রাজনীতির ভেতরেও। শুক্রবার ফটিকছড়িতে বিএনপির এক অভ্যন্তরীণ সভায় অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে কথা বলায় দলের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা ইয়াকুব অভিযোগ করেন, “ইজারা ছাড়া বালু উত্তোলন আর চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় যুবদল নেতা মাঈন উদ্দীনের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। বারবার ইউএনওকে জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।”
প্রশাসন শুধুই আশ্বাস দিচ্ছে
প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,“অবৈধ বালু মহালের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলে। নতুন কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, “যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তারাই বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ করে।” প্রশাসনের অভিযান বাস্তবে তেমন দৃশ্যমান নয় বলেই মনে করছেন তারা।
এআরই/বাংলাধারা













