চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দুই পক্ষ রীতিমতো সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এতে বিএনপির উত্তর জেলা আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারসহ তার সহযোগীরা আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তারঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রগুলো জানায়, গোলাম আকবর খোন্দকার সাবেক উপজেলা বিএনপি সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের কবর জিয়ারতে সুলতানপুর যাচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা একটি শোভাযাত্রা নিয়ে সত্তারঘাট এলাকায় পৌঁছালে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা মুহূর্তেই সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সংঘর্ষ চলাকালে গোলাম আকবর খোন্দকারের গাড়িবহরে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন গোলাম আকবর খোন্দকার, তার এপিএস আসিকুর রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ, রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন, ছাত্রদল নেতা নাঈম উদ্দিন মিনহাজসহ অনেকে।
গোলাম আকবর খোন্দকারের সহযোগীরা দাবি করেন, তাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। এক নেতার ভাষ্য, “আমরা কেবল কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়।”
গোলাম আকবর খোন্দকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল এবং গুলি গলার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঘটনার পর উত্তেজিত নেতাকর্মীরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “একপক্ষ কবর জিয়ারতে যাচ্ছিল, অন্যপক্ষ একটি শোভাযাত্রা নিয়ে আসছিল। সত্তারঘাট এলাকায় উভয় পক্ষের মুখোমুখি হওয়ায় সংঘর্ষ বাঁধে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “আমি অসুস্থ থাকার কারণে ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশও দিইনি।”
তবে তার পক্ষের নেতারা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরাই পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে, যাতে তাদের আয়োজন বানচাল হয়।
এদিকে সংঘর্ষের পর বিএনপি হাইকমান্ড চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, খুব শিগগিরই নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন গোলাম আকবর খোন্দকার।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে চলেছে। এরইমধ্যে অন্তত ১৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে অধিকাংশই রাজনৈতিক বিরোধের ফল।
বাংলাধারা/এফইএমএফ