২৮ অক্টোবর ২০২৫

বিএমএ নেতার চিকিৎসা রাজনীতি, নিরুৎসাহিত হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গঠিত সার্ভেইল্যান্স টিমে বিতর্কিত বিএমএ নেতা ফয়সল ইকবালকে সদস্য হিসেবে রাখার পর নানা মহল থেকে সমলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্কে চলে আসায় ‘বিতর্ক এড়াতে’ কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এই বিএমএ নেতাকে।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ডাক্তার ফয়সল ইকবাল স্ট্যাটাস দিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরুৎসাহিত করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ নিয়ে অনেক খবরও প্রকাশিত হয়েছে।

এমনকি কেন্দ্রীয় বিএমএ ও সকল বিএমএ শাখার নেতারা এখন ও কিভাবে বহিষ্কার না হয়ে চেয়ারে বসে আছে বলে ক্ষমতা প্রদর্শনমূলক প্রশ্ন তুলেছেন বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার নেতা ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী।

তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বিএমএ-এর প্রস্তাবনার যথাযথ বাস্তবায়ন করে নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করুন।
বিদ্রঃ ভয়ে ভয়ে শেয়ার করলাম আবার না তিনি বলে বসেন, কেন্দ্রীয় বিএমএ ও সকল শাখার বিএমএ নেতারা এখনও কিভাবে বহিস্কার না হয়ে চেয়ারে বসে আছে?’

এরও আগে ‘নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদের কেই নিতে হবে’ শিরোনামে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরুৎসাহী করে ফের আরও একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

তিনি এক স্ট্যাটাসে পিপিই সরবরাহে সরকারে ফের অপপ্রচার করে লিখেছেন, ‘আমি কি ভুল বলেছিলাম? আমার কেন্দ্রীয় মহাসচিব কি বলেছেন দেখেন। সরবরাহ চেইনে কারা জড়িত ছিল যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক। এদের কারণেই আজ পর্যন্ত আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৩২৪।
বিদ্র : কাউকে কটাক্ষ করে খারাপ ভাষায় কিছু না লেখার অনুরোধ রইল।’

এছাড়াও করোনাযোদ্ধা চিকিত্‍‌সক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরুৎসাহিত করে এবং শেখ হাসিনা সরকারকে বিব্রত পরিস্থিতি ও প্রশ্নবিদ্ধ করে অপপ্রচার করে লিখেছিলেন ‘দেশ তো দেখি পিপিপিতে সয়লাব, ভিক্ষুকও পিপিপি পড়ে ভিক্ষা করছে। সন্মানিত চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবাকর্মী ভাইয়েরা, লাইভ-এ দেখলাম ১০ লাখের অধিক বিতরণ। আপনারটা পেয়েছেন তো? পিপিপি নয় PPE’

অথচ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র তখন জানিয়েছি, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ১০ হাজার ৬শ ৫৬ টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে৷ বর্তমানে জেলায় ২৩ হাজার ৪শ ৪৭ টি পিপিই মজুদ আছে৷ সরকার শীঘ্রই এন-৯৫ মাস্কসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করবে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিত্‍‌সক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে পরিষেবা দিচ্ছেন, সে জন্য তাঁদের সাহসিকতার পুরস্কার দেবে বলেও ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএমএ নেতার ফেইসবুকে এমন সব স্ট্যাটাস দেখে সচেতন নগরবাসী মনে করছেন, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী করোনাযোদ্ধা চিকিত্‍‌সক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরুৎসাহিত করে দায়িত্বে থেকে সরকারের অপপ্রচার করছেন।

উল্লেখ্য, ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী একাধারে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক, স্বাচিপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, করোনা প্রতিরোধে স্বাচিপ এর বিভাগীয় সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন করছেন।

ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষকে চিকিৎসাবঞ্চিত করা চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। টিম থেকে ফয়সাল ইকবালকে বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে বিএমএ সভাপতি মুজিবুল হক খানকে নেওয়া হয়েছে কমিটিতে।

গত ৪ এপ্রিল এক সভায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরসহ ব্যবহারের সুবিধাসহ ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করেছিল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গঠিত বিভাগীয় কমিটি। কিন্তু দুই মাস পরও চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা শুরু হয়নি।

হাসপাতালগুলোর দ্বারে দ্বারে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর খবর আসছে গণমাধ্যমে। চট্টগ্রামে চিকিৎসা খাতে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৭ মে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে কোভিড-১৯ এবং অন্য সব ধরনের রোগীকে আলাদা ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দিতে নির্দেশনা আসে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই নির্দেশনাকে পাত্তাই দেননি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিকরা।

এ অবস্থায় গত ৩০ মে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে চিকিৎসা সেবা মনিটরিংয়ের জন্য চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে সার্ভেইল্যান্স টিম গঠন করা হয়।

# বিএমএ নেতার ফেইসবুকে স্ট্যাটাস নাকি হুমকি!

# দায়িত্বে থেকে সরকারের অপপ্রচারে ব্যস্ত ডা. ফয়সল

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন