২৪ অক্টোবর ২০২৫

বিতর্কিত সংগঠন আরসা’র অর্থ সম্পাদক ইউনুস গ্রেফতার

কক্সবাজারের উখিয়ায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’র ওলামা কাউন্সিল কমান্ডার ও অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুসকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এসময় তার কাছ থেকে বিদেশী রিভলবারসহ কার্তুজ ও স্মার্ট ফোন জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রাত ১০টায় উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের তাজনিমার খোলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার ও এসব মালামাল উদ্ধার করা হয়।

আটককৃত আরসা কমান্ডার ইউনুস মায়ানমারে মংডু টাউনশীপের বাসিন্দা মৃত হাবিবুল্লাহ’র ছেলে। বর্তমানে তিনি উখিয়ার চেংখালীর ক্যাম্প ১৯ এর ব্লক- সি/১৩ তে শরনার্থী হিসেবে রয়েছেন।

র‌্যাবের দেয়া তথ্যমতে, আরসার অর্থ সম্পাদক ইউনুস মিয়ানমারে থাকাবস্থায় মংডু টাউনশীপের মেরুল্লা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৬ সালে মৌলভী আরিফুল্লাহ এর মাধ্যমে ‘আরসা’তে যোগ দেন। তিনি আরসার আমীর আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী, ওস্তাদ খালেদ, সমিউদ্দিনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলেম-ওলামা, হেডমাঝি, সাবমাঝি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে মিটিং করে আরসা সংগঠনে যোগদানের জন্য উৎসাহ দেন তিনি। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আরসার অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

তার বরাত দিয়ে আরসার টাকার উৎস সম্পর্কে র‌্যাব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আরসার কার্যক্রমের জন্য প্রতিমাসে সৌদি আরব থেকে আবুল বশর এক লাখ টাকা, মৌলভী ইসমাইল এক লাখ টাকা, পারভেজ ১৫ হাজার টাকা, আমেরিকা থেকে জহুর আলম এক লাখ টাকা, মালয়েশিয়া থেকে হারুন এক লাখ টাকা, থাইল্যান্ড হতে হারুন ৬৫ হাজার টাকা এবং সৌদি আরব থেকে মো. ইসলাম প্রতিবছর এক লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রেরণ করে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া থেকে অজ্ঞাত রোহিঙ্গা টাকা পাঠান। মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রাম হতে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিমাসে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০-১৫ লাখ টাকা আরসার ক্যাম্প জিম্মাদারদের কাছে আসে। এ টাকা দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় ও দলের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা, বেতন দেওয়া হয়। বর্তমানে মাওলা ইউনুসের কাছে তার বিকাশ একাউন্টে প্রায় ৩৩ থেকে ৩৭ হাজার টাকা রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা ইউনুস আরো জানিয়েছেন, সংগঠনের জন্য গত এপ্রিল হতে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে আরসা সমর্থিত বিভিন্ন গ্রুপ, ব্যক্তি ও সংগঠন হতে প্রায় ১৩ লাখ ৮১হাজার ৬৯৫ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

ধৃতের বরাত দিয়ে র‌্যাব আরো জানায়, আরসাতে ২০০-২৫০ জন সদস্য রয়েছে। তারা ২০১৬ সালে মায়ানমারে থানায় আক্রমন করে ৭০টি একে-৪৭ অস্ত্র লুট করে। আরসা সদস্যরা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর ক্যাম্প-৬ এর সমিউদ্দিন ও ক্যাম্প-১৭ এর হোসেনের কাছে জমা রাখে। পরে তা বিভিন্ন দলে ভাগ করে দেয়া হয়।

মাওলানা ইউনুসের বরাতে র‌্যাব আরো জানিয়েছে, আরসা সন্ত্রাসী সমিউদ্দিন ও যোবায়ের ককটেল বোমা বা বিস্ফোরক তৈরী করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশীয় তৈরী এলজি অস্ত্রের চাহিদা বেশি। আরসা সদস্যরা অস্ত্র ক্রয় করার পর নগদ অর্থ হাতে হাতে লেনদেন করে অথবা বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করে। মায়ানমারের বুথিডং ও মন্ডু শহরের মাঝে বিভিন্ন ছোট ছোট পাহাড়ে ওস্তাদ খালেদ, সামসু এবং হামিদ হোসেন আরসা সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়। আরসা সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট কোন কার্তুজ বরাদ্দ নেই তবে বিভিন্ন অপারেশনের পূর্বে বেশি করে কার্তুজ দেয়া হয়।

র‌্যাব ১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, ধৃত আরসা কমান্ডারের কাছ থেকে আরসা সদস্যদের বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ পাওয়া গেছে। তাছাড়া তার দেয়া তথ্যে জানা গেছে বর্তমানে আরসার কাছে প্রায় ২০টি টাইপ-৭৪ এলজি, জেআরজি অস্ত্রসহ ও বিপুল পরিমানে হাত বোমা (হ্যান্ড গ্রেনেড) রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ধৃত ইউনুসের বিরুদ্ধে হত্যা, পুলিশ এসল্ট ও অগ্নিসংযোগের দায়ে উখিয়া থানায় ৫ টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর হেডমাঝি আনোয়ারকে কুপিয়ে হত্যা, ২০২৩ সালের ৩ মার্চ রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিকে গুলি করে হত্যা, ১৩ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগানো, ১১ এপ্রিল এবং ৯ জুন এপিবিএন’র উপর হামলার মামলা অন্যতম।

এছাড়াও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো কয়েকটি হত্যাকান্ডের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন মর্মে স্বীকারোক্তি দেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো ২০২১ সালে ২২ অক্টোবর রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৮ এর একটি আবাসিক মাদ্রাসায় অবস্থানরত ৬জন ছাত্র-শিক্ষক হত্যা, ২০২৩ সালের ৩ মার্চ ইসলামী মাহাযের নেতা রফিক এবং ১৮ মার্চ ইসলামী মাহাযের নেতা হাফেজ মাহবুবকে হত্যা।

এএসপি আরো বলেন, ধৃতের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা গ্রহন করে উখিয়া থানায় সোপার্দ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন