২৮ অক্টোবর ২০২৫

বিদায়ী ২০১৯-এ কক্সবাজারের আলোচিত ঘটন-অঘটন

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

মঙ্গলবার সূর্যাস্তের মাধ্যমে বিদায় নিচ্ছে নানা ঘটন-অঘটনের বছর ২০১৯। ভালো থাকার প্রত্যয়ে শুরু হওয়া বছরটিতে ইতিবাচক, নেতিবাচক আবার কিছু লোমহর্ষক ঘটনা দিয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বছরটি। এসব ঘটন-অঘটনের মাঝে বেশ কয়েকটি ঘটনা কক্সবাজারের সব মহল আলোচনায় রেখেছে। সামনের দিনগুলোতেও এসব ঘটনার রেশ নানা জায়গায় থাকবে বলে অভিমত তাদের।

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ :
দেশে ইয়াবার আগ্রাসন থামাতে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে। এরপর শুরু হয় সমানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। কাছের চেনাজানা অনেক মানুষ মুহূর্তে লাশ হচ্ছে দেখে মধ্যস্ততায় ‘আত্মসমর্পণে’ আগ্রহ প্রকাশ করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

সেই মতে, বছরের শুরুতে ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন।

ইয়াবার প্রধান ‘গডফাদার’ হিসেবে অভিযুক্ত হাজী সাইফুল নিহত :
রাষ্ট্রীয় ইয়াবা তালিকার প্রধান গডফাদার হিসেবে অভিযুক্ত সাইফুল করিম ওরফে হাজী সাইফুল ৩০ মে দিনগত রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। টেকনাফ স্থল বন্দরের সীমানা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারাযান বলে জানিয়েছিলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

এসময় ঘটনাস্থল হতে ৯টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা এবং এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ওসি। নিহত সাইফুল (৪৫) টেকনাফ শীলবুনিয়াপারার মোহাম্মদ হানিফ ওরফে হানিফ ডাক্তারের ছেলে।

এদিকে, তিনিসহ প্রায় দু’শ ইয়াবা অভিযুক্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেও এখনো পর্যন্ত ইয়াবা আসার চালান বন্ধ হয়নি। বরং আরো বেড়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। অতিসম্প্রতি আইনশৃংখলা বাহিনী লাখে লাখে ইয়াবার চালান জব্দ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

উখিয়ায় ফোর মার্ডার :
২০১৯ সালে কক্সবাজারের জন্য একটি বেদনা বিদুর দিন ২৫ সেপ্টেম্বর রাত। এ রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং বড়ুয়া পাড়ায় একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা করা হয়। হত্যার তিনমাস পরও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি সিআইডির হাতে রয়েছে।

নিহতরা হলেন, উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং বৌদ্ধ পল্লীর বাসিন্দা এবং কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৪) রোকেনের মা সখী বড়ুয়া (৬২), রোকেনের একমাত্র সন্তনন রবিন বড়ুয়া (৫) ও রোকেনের ভাই শিবু বড়ুয়ার শিশু কন্যা সনি বড়ুয়া (৬)।

মহেশখালীতে জলদস্যু ও অস্ত্রকারিগরদের আত্মসমর্পণ :
কক্সবাজারের জন্য আলোচিত ঘটনাছিল মহেশখালীতে জলদস্যু ও অস্ত্রকারিগরদের পৃথক আত্মসমর্পণ। সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৯৪টি অস্ত্র জমা দিয়ে ২০ অক্টোবর প্রথম আত্মসমর্পণ করে ৬টি জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন সদস্য।

মহেশখালীর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জলদস্যু আনজু-রমিজ-নুরুল আলম ওরফে কালাবদা-জালাল-আইয়ুব ও আলাউদ্দিন বাহিনীর সদস্যরা এসময় স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে আসেন।

প্রশাসনিক সহযোগিতায় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা দেখে পরবর্তীতে ২৩ নভেম্বর ১৫৫টি দেশী অস্ত্র, ২৭৫ রাউন্ড কার্তুজ ও অস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জাম জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে মহেশখালীর ৯৬ জন জলদস্যু ও অস্ত্র কারিগর। এদের মাঝে বহুল আলোচিত অস্ত্র কারিগর জাফর আলমসহ ১৮জন অস্ত্রকারিগর ছিলেন।

বিদেশী পর্যটক ধর্ষন চেষ্টা :
কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা অস্ট্রেলিয়ান এক নারী পর্যটককে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামুর প্যাঁচারদ্বীপের অনুমোিদনহীন ‘গুডভাইভ’ নামের কটেজে। ১৫ ডিসেম্বর রাতে সংগঠিত ঘটনায় কটেজ মালিক শ্যাম ও রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনসার উল্লাহ ও আবদুল গফুরকে গ্রেফতার করা হয়। শ্যাম মারমেইড ইকু ও বীচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক সোহাগের ছোট ভাই।

ইয়াবা সেবন ও গণধর্ষণে এ লেভেল-শিক্ষার্থীর মৃত্যু :

বছরের শেষ দিকে এসে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসে অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন ও গণধর্ষণে ঢাকার বৃটিশ কাউন্সিলের এ-লেভেল কোর্সের শিক্ষার্থী স্বর্ণা রশিদ। আত্মসমর্পণে কারান্তরিণ থাকা শাহজাহান আনসারীর মালিকানাধীন কলাতলীর ‘জামান হোটেলে’ উঠা স্বর্ণা রশিদ ঢাকার কোতোয়ালী চকবাজার এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ পাপ্পুর বখে যাওয়া মেয়ে।

এ ঘটনায় তার বয়ফ্রেন্ড ওয়ালী আহমদ খানকে গ্রেফতার করে। ওয়ালী ঢাকার ২২ সিদ্ধেশ্বরী রোডের মনিমান টাওয়ারের বাসিন্দা আলী রেজা খানের ছেলে। প্রথম দিকে স্বর্ণা অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনে মারা যাবার কথা জানালেও এখন তাকে গণধর্ষণের আলামতও মিলছে বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎিসক এবং পুলিশ।

সমুদ্র সৈকতের অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গতে আপীল বিভাগের চুড়ান্ত রায় :
বছরের শেষ সময়ে এসে কক্সবাজারের জন্য সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাড়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের একটি রায়। কক্সবাজারে প্রতিবেশগত (ইকোলজিক্যাল) সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) হোটেল-মোটেল জোনে (ঝিলংজা মৌজায়) থাকা স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলতে ২৩ ডিসেম্বর সোমবার আপিল বিভাগ একটি রায় জারি করে।

তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সমুদ্র তীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সরকারকে নীতিমালা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন করে কাউকে যাতে সমুদ্র তীর লিজ দেওয়া না হয় সে বিষয়ে সরকারকে নজর রাখতে হবে। ভেঙ্গে ফেলতে হবে সৈতক তীরের স্থাপণা। বছরের শেষ সময়ে আপীল বিভাগের এ রায় হোটেল ব্যবসায়ী ও লীজ গ্রহীতাদের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজার দেশের পর্যটন রাজধানী। বিশ্বময় বিকাশ যোগ্য পর্যটন শিল্পের উপরই আগামীর জাতীয় অর্থনীতি নির্ভর করছে।

তাই আমাদের কামনা, কোন অঘটন যেন কক্সবাজারকে ছুঁতে না পারে। প্রশাসন, পর্যটন ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনগণ সর্বোপরী সবার এ বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। অতীতের ভূলগুলো থেকে আমরা সে শিক্ষাটা গ্রহণ করলে সুন্দর আগামী উপহার দেয়া সম্ভব।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন