২৯ অক্টোবর ২০২৫

বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য বৃদ্ধি জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে : ক্যাব

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

মুজিববর্ষে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সাধারন মানুষ আশা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য, বিদ্যুৎ-পানি ও গ্যাসের মূল্য এই বছরে তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে। কিন্তু বছরের শুরুতেই একসঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়িয়েছে সরকার। তাই এটি নগরবাসীর জীবনযাত্রায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে দাবি করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও মহানগর কমিটি।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম যেভাবে হু হু করে বেড়ে গিয়ে সাধারন মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে ১৬ কোটি সাধারন জনগনের স্বার্থ চিন্তা না করে বিদ্যুতে খুচরা পর্যায়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহক ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, মাঝারী শিল্প গ্রাহক ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ওয়াসার পানির দাম ২৭ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

এমনিতে গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। চালের দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা। বেড়েছে চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতিও হঠাৎ লাফ দিয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখনই বিদ্যুতের দাম বাড়াল সরকার।

একতরফাভাবে গ্রাহকের মতামত ছাড়া ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর ভোক্তা সংরক্ষন আইনের সুস্পষ্ট লংগনের প্রতিকার দাবি করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও মহানগর কমিটি।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন সরকারী ও ব্যক্তি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে আবেদনের প্রেক্ষিতে ভোক্তাদের স্বার্থ চিন্তা না করে ভুর্তকি হ্রাস, সিস্টেম লস, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র পরামর্শে বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে এ প্রক্রিয়াকে হতাশাজনক ও বিইআরসির সরকারের গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ সংরক্ষণের বর্হিপ্রকাশ বলে অবিলম্বে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ক্যাব।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আবাসিক বা শিল্পখাত, কোনো পর্যায়ের ভোক্তার জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নাই। বিদ্যুৎ খাতে অযৌক্তিক ব্যয়, সিস্টেম লস, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপরিকল্পিত ব্যয় ও লুটপাট না কমিয়ে সরকার জনগণের ব্যয়ভার বাড়িয়ে দিয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিদ্যুতের এই দাম বাড়ার প্রভাব কেবল বাসাবাড়িতে পড়বে তা নয়, কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদন খরচও অনেক বাড়বে। করেনা ভাইরাসসহ বৈশ্বিক অনেকগুলি কারনে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। বেশির ভাগ সূচকই নিম্নগামী। বিশ্ব অর্থনীতিও মন্দার আশঙ্কায়। কমে যাচ্ছে সামগ্রিক চাহিদা। এ রকম এক সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা সময়োপযোগী। এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিম্ন ও মধ্যবিত্তের স্বার্থবিরোধী। অর্থ খরচ করে অর্থহীন কাজ হয়েছে। সব ক্ষেত্রে জনগণের খরচ ও পণ্যের দাম বাড়বে। পুরো প্রক্রিয়াটিই জনগণের বিরুদ্ধে চলে গেছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করেন, বাজারে যখন লাগামহীন সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষ অসহায়, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্প খাত ঝুঁকিতে, তখন বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক? সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডিবির দায়িত্ব হলো জনগণকে সেবা দেওয়া, মুনাফা করা নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ অনুৎপাদনশীল খাতে যে বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করছেন, সিস্টেম লস, চুরি বন্ধ করতে পারলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি বোঝা চাপাতে হতো না। অন্যদিকে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পের উদ্যোক্তারা বিদ্যুতের এ দাম বাড়গানোর কারনে তৈরি পোশাক খাতসহ অনেক শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।

নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এমন এক সময়ে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়াল, যখন চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। চীনের সাম্প্রতিক কোরোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে দেশের  অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়লে সেই প্রভাব যে আরও কষ্টকর হবে। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে শিল্পগ্রাহকদের কাছ থেকে যে বাড়তি অর্থ পাবে, তা শিল্পের মালিকেরা নিজেদের পকেট থেকে দেবেন না। তাঁরা উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকে উশুল করবেন। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে শেষ বিচারে ভোক্তাদের ওপরই আর্থিক চাপ বাড়বে, বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও কমে যাবে।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পদক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন