চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে অবস্থিত অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে চরম অসন্তোষ ও অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিধি বহির্ভূতভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে একজন সহকারী শিক্ষক কাজী সুলতানা ইয়াছমিনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-গত ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।
অভিযোগে বলা হয়, জুলাই ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বিদ্যালয়ে নিয়মিত পরিচালনা কমিটি না থাকায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে একটি এডহক কমিটির অনুমোদন দেয়। ওই এডহক কমিটি বিধি বহির্ভূতভাবে জ্যেষ্ঠতা নীতিমালা উপেক্ষা করে গত ১৬ জুন জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ১৮ নম্বর ধারী সহকারী শিক্ষক কাজী সুলতানা ইয়াছমিনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করে।
এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এডহক কমিটির এমন সিদ্ধান্তের ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদানসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগকারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অবসান এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দায়িত্ব অর্পণের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালনের জন্য তিন বছর সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কাজী সুলতানা ইয়াসমীনের সেই অভিজ্ঞতা নেই। তাদের অভিযোগ তদবির ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তিনি এ পদ পেয়েছেন।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজনৈতিক পরিচয় বদল, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বেচ্ছাচারিতা এবং শিক্ষক–কর্মচারীদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, হিসাবরক্ষক ইমরান হোসেন কাজী সুলতানা ইয়াসমীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন নারী শিক্ষকদের সাথে তার নানা আপত্তিকর কথোপকথনের তথ্য স্কুলে ছড়িয়ে পড়লে এবং এতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভুক্তাভোগী সংশ্লিষ্ট নারী শিক্ষককে নানা ভাবে হয়রানি করছে হিসাব রক্ষক ইমরান হোসেন এবং প্রধান শিক্ষক কাজী সুলতানা ইয়াছমিন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলে আশাংকা করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
গত জুলাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কবিতা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেলেও তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরে কাজী সুলতানা ইয়াসমীন তার স্থলাভিষিক্ত হন।
নাম প্রকাশ না করে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, সুলতানা কাজী ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক হিসেবে পরিচয় দিনে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ভোল পালটে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে স্বেচ্ছাচারিতা করছে বিদ্যালয় পরিচালনায়। মনগড়া, শিক্ষকদের জন্য চরম অবমানকর পরিস্থিতি তৈরি করায় শিক্ষকরা চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী সুলতানার স্বেচ্ছাচারিতা এবং দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী ইমরান হোসেন এর আগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নেতা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন সে বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সখ্যতা তৈরি করে এ সব অপকর্ম করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কাজী সুলতানা ইয়াছমিন বলেন অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বিধিমালা বইয়ে উল্লেখ আছে জ্যেষ্ঠতা না থাকলেও যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, সেরা শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব নিতে পারবেন। একটা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে হলে ১০ বছরে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। আমার শিক্ষকতার বসয় ১৮ বছর।
তিনি বলেন’ অতীতে এ বিদ্যালয়ে যেমন সুনাম ছিল বর্তমানেও তা ধরে রাখতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দু একজন ফাঁকিবাজ শিক্ষক ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে লক্ষ্যে নানা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তাদের খুশি করতে এখানে বসি নাই। যদি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কারো সহ্য না হয় তাহলে আমাকে আগের জায়গায় দিলে আমি বাঁচি।
এই বিষয় জানতে বিদ্যালয়ে এডহক কমিটির প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।











