শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »
১৩তম বিবাহ বার্ষিকীর দিন। দিনটিকে ঘিরে স্ত্রীকে ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন যুবলীগ নেতা রবিউল হোসেন সেলিম। উৎফুল্ল মনে প্রতিদিনের মতো সকালে বের হন ব্যবসায়িক কাজে। এই যাত্রা পথই কাল হলো সেলিমের। মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিএসআরএম গেট এলাকায় এসেই নিভে গেল প্রাণ, স্ত্রীকে বিধবা করেই সামিল হলেন অনন্ত অসীমের পথযাত্রায়।
রোববার সকাল ১১টায় দ্রুতগামী ‘তিশা’ বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হলে নিভু নিভু প্রাণে সেলিমকে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ততক্ষণে নিভে গেলো জীবন-প্রদীপ। কর্তব্যরত চিকিৎসক সাদা কাপড়ে ঢেকে দিলেন মুখ। জানিয়ে দিলেন- কিছুক্ষণ আগে বেঁচে থাকা মানুষটি এখন লাশ।
এর ঘণ্টাখানেক আগে স্ত্রী রুমাকে উৎসর্গ করা যেই ফেসবুক পোস্টে বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছে ঘণ্টা পরই সেই পোস্টে আসতে থাকে বিষাদবার্তা। ২০ মিনিট আগেও ম্যাসেঞ্জারে এক্টিভ ছিলেন যিনি তার রক্তাক্ত লাশের ছবি ছড়িয়ে গেছে চারদিকে। শোকের ছায়া নেমে এলো পরিবার, এলাকা ও যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে। স্ত্রীর বিলাপের সুর বেশিক্ষণ টিকে থাকেনি, পড়ে আছেন বেহুঁশ হয়ে।
ছুটে এলেন স্বজনরা, কান্নার রোলে পড়ে গেল চারদিকে। রাজনৈতিক সহকর্মীদের চোখের কোণে জমে গেলো নিরব অশ্রু। সাদা কাফনে মুড়িয়ে দেওয়া স্বামীকে সাদা শাড়ি পরিয়ে শেষবারের দেখতে এসেছেন স্ত্রী।
আজ থেকে ১৩ বছর আগে এই দিনটিতে হলুদ মাখানো গোসল সেরে, লাল বেনারসি পরিয়ে প্রিয়তমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন সেলিম। আজ সেই দিনেই জীবনের শেষ গোসল সেরে বিদায় নিলেন শেষ বারের মতো।
তিন সন্তান আকিল, আনাফ ও আফরা বাবাকে আর কোনোদিন দেখতে পাবে না। বাবার কফিনের পাশে দুই ছেলে শামিল হয়েছে আজ বাবাকে বিদায় জানাতে। এই বিদায় ছিল শেষ বিদায়, চিরবিদায়।













