বিশ্ব তাবলিগ জামাতের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। এবারই প্রথম তিন পর্বে হবে ইজতেমা। প্রথম দুটি-কাল থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি শুরায়ি নেজাম বা জুবায়েরপন্থিদের। তৃতীয় পর্বে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা করবেন সাদপন্থিরা। প্রতিটি পর্বেই আলাদা মোনাজাত হবে।
প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন খিত্তা ও পয়েন্টের জিম্মাদার মুসল্লিরা এরই মধ্যে ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। যারা ইজতেমা ময়দানে এসেছেন তারা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান করছেন।
মাওলানা জোবায়েরের অনুসারী ও ইজতেমা আয়োজকেরা জানান, এবার তারা ইজতেমা করবেন দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। এরপর আগামী ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার অন্য অংশের মুসল্লিরা। দুই ধাপের আখেরি মোনাজাত হবে যথাক্রমে আগামী ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি।
তিনি জানান, ৩১ জানুয়ারি শুরু হওয়া ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশগ্রহণ করছেন গাজীপুর, টঙ্গী, ধামরাই, গাইবান্ধা, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, কাকরাইল, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাংগা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও রাজবাড়ী জেলা। এ পর্বে ঢাকার মিরপুর, কাকরাইল ও ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন।
দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করবেন- মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাংগাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নওগাঁ ও বান্দরবন জেলা। এ পর্বে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর, ঢাকার একাংশসহ ২২টি জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন।
ইজতেমার গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, আমাদের সাথি ভাইয়েরা গতকাল সকাল থেকেই ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। তবে গতকাল রাতে সাথিরা আসেন সবচেয়ে বেশি। আজ বৃহস্পতিবারও সারা দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা আসবেন। এর মধ্যেই ভরে গেছে মাঠের বেশির ভাগ অংশ।
তাবলিগ জামাত সূত্রে জানা যায়, তাবলিগ জামাত এখন দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা। অন্য ভাগে আছেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীরা। এর মধ্যে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের ইজতেমা আগামী ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পালনের কথা আছে।
এবারের ইজতেমাকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে আইজিপি বাহারুল আলম ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করবেন। পরে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় সভা করবেন। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের ২নং গেইটের বিদেশি নিবাসের কাছে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, এবারের ইজতেমা হযরত ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামের অধীনে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। বিরতিহীনভাবে দ্বিতীয় পর্ব ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য পুরো ৬৪টি জেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। কোন জেলা কোন পর্বে অংশগ্রহণ করবে তা এরইমধ্যে জেলাওয়ারি মুরুব্বিদের জানানো হয়েছে।