শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »
চট্টগ্রামে শতভাগ রপ্তানিমুখী বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো থেকে জেটিতে সঠিক সময় কনটেইনার না পৌঁছায় জাহাজিকরণ হয়নি কয়েকহাজার কনটেইনার। বেসরকারি আইসিডিগুলোর তৎপরতার অভাবে বুকিংকৃত কনটেইনরের স্থান খালি রেখে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে জাহাজগুলো।
গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানিপণ্য নিয়ে ছেড়ে গেছে ৪টি জাহাজ। জানা যায়, ২৫০ একক রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জাহাজে না তুলে বন্দর ছেড়ে যায় জাহাজগুলো। এর ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছে শিপিং লাইনগুলো।
মূলত বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে রপ্তানিমুখী কনটেইনার নির্দিষ্ট সময় জেটিতে না পৌঁছায় ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় ’এক্সপ্রেস দুলাগিরি’, ‘এইচআর হিরা’, ‘এসওএল প্রমিজ’ ও ‘এসওএল ডেল্টা’ নামের চারটি জাহাজ।
চট্টগ্রামে মোট বেসরকারি আইসিডির সংখ্যা ১৯টি। যেখান থেকে শতভাগ রপ্তানিমুখী কনটেইনাার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজিকরণ হয়। এছাড়া আমদানি পণ্যের ২৫ শতাংশ কনটেইনার জমা থাকে এসব আইসিডিগুলোতে। এসব আইসিডিগুলোতে মোট কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউএস। আইসিডিগুলোতে ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্যেও জমা রাখা হয় এবং পরে তা প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়।
তবে আইসিডিগুলো অব্যবস্থপনার জন্য পবিত্র ইদুল আযহার পর থেকে সঠিক সময়ে বন্দর জেটিতে পৌঁছাতে পারছে না কনটেইনার। ফলে প্রায় ২৫০ একক কনটেইনার খালি রেখে নিয়মিত বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে রপ্তানিমুখী জাহাজ। এছাড়া পণ্য জাহাজিকরণ হবে না এই বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকায় অন্যান্য রপ্তানিমুখী কন্টেইনারও জাহাজিকরণ করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে বিদেশীদের কাছে দিন দিন চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি ও নষ্ট হচ্ছে।
বন্দরে ইয়ার্ডে কনটেইনাার জাহাজে হ্যান্ডেলিংয়ের বিষয়ে বন্দরের দায় থাকলেও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোর কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সম্প্রতি দেশের পোশাক খাত আবার আলোর মুখ দেখলেও এই অব্যবস্থপনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পণ্য না পৌঁছানোয় পোশাক শিল্পসহ রপ্তানি খাতে বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
আইসিডিগুলো থেকে বন্দর জেটিতে কনটেইনার নির্দিষ্ট সময়ে না পৌঁছানোর জন্য আইসিডিগুলোর অব্যবস্থাপনাকে দায়ি করছেন শিপিং লাইনের শীর্ষ কর্মকর্তরা।
অন্যদিকে বেসরকারি আইসিডিগুলোর কোনো অব্যবস্থপনা নেই বলে জানান বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার। তিনি বাংলাধারাকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে আইসিডিগুলো থেকে কনটেইনার বন্দর জেটিতে পৌঁছায়। তবে স্বল্প সময় পাওয়ার কারণে তা জাহাজে লোড করা সম্ভব হয় না।
এছাড়া তিনি বলেন, অনেক সময় ওভার বুকিংয়ের কারণে এমনটি ঘটে থাকে যার সাথে বেসরকারি আইসিডিগুলোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি আরও বলেন, একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়ার পর থেকেই আমদানি পণ্য হ্যান্ডেলিং করতে সময়ক্ষেপণ হয়ে যায়। যার ফলে রপ্তানিমুখী পণ্য লোড করার সময় তেমন একটা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বাংলাধারাকে জানান, কতগুলো পোশাক পণ্যবাহী কনটেইনার এখনও পর্যন্ত জাহাজিকরণ হয়নি সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য আমরা পায়নি। তবে পোশাক পণ্যবাহী কনটেইনাার যদি নির্দিষ্ট সময়ে না পৌঁছায় সেটার দায় পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায় না। তবে বন্দরের সক্ষমতার ব্যাপারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে শিপিং লাইন ও জাহাজ মালিকদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বাংলাধারাকে বলেন, বন্দরের বাইরের কোনো কনটেইনার যদি জাহাজিকরণ না হয় সেক্ষেত্রে বন্দরে উপর দায় চাপানোর কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র বন্দর ইয়ার্ডের কনটেইনার জাহাজিকরণ না হলে বন্দর দায়ি থাকবে।
আমদানি পণ্য খুব দ্রুত জাহাজ থেকে ইয়ার্ডে নেয়া যায় সেক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ সব সময় সজাগ থাকে বলে জানান তিনি।













