২৯ অক্টোবর ২০২৫

‘বেহেশত’ থেকে ‘ভারত’, মোমেন বিতর্কে বিব্রত আওয়ামী লীগ

বাংলাধারা ডেস্ক »

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে তখন মন্ত্রীদের একের পর এক বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। ‘অতিরঞ্জিত ও বিতর্কিত’ বক্তব্যে ক্ষিপ্ত এখন খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও। ‘বেহেশত’ থেকে ‘ভারত’ অতিবচনের কারণেই দেশে এখন সমালোচিত ব্যক্তি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

দেশের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪৪ টাকা বৃদ্ধি করার কারণে যখন জনমনে অসন্তোষ, ঠিক তখনই বললেন ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’। এমন মন্তব্য করে আগুনে ঘি ঢেলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে আলোচনার মুখে পড়েন মোমেন। এর রেষ যেতে না যেতেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন ‘ভারতকে বলেছি আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করার করতে’।

দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে আট বিভাগের আটজন সাংগঠনিক সম্পাদককে নিয়ে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বৈঠকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম অগ্রগতির বিষয় ছাড়াও দলের নেতা ও কিছু এমপি-মন্ত্রীর বিব্রতকর মন্তব্যের বিষয়ে শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা।

আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সভায় আব্দুল মোমেনের ‘বিভ্রান্তিমূলক’ ও ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য সভাপতির কাছে তুলে ধরা হয়। দলের সভাপতি বিষয়গুলো শুনেছেন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলেননি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে ঢাকা টাইমসের প্রশ্ন ছিল আব্দুল মোমেনের একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যে আওয়ামী লীগ বিব্রত কি না? জবাবে তিনি বলেন, মোমেনের এসব অতিবচনে অবশ্যই আওয়ামী লীগ বিব্রত।

এই নেতা আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস এবং জনগণকে বোঝাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে, তখনই উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছেন সরকারের দায়িত্বশীল কয়েকজন মন্ত্রী। তাদের কাছ থেকে কখনো এসব আশা করা যায় না।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েকজন মন্ত্রীর অতিবচনে একের পর এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে সরকার। দলের হাইকমান্ড থেকে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েও মন্ত্রীদের ‘অতিবচন’ থামানো যাচ্ছে না। এসব বেফাঁস কথা-বার্তা নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিতর্কিত মন্তব্য করলে তো সমালোচনা হবে। আর জন্য দল অবশ্যই বিব্রত।

মন্ত্রীদের একের পর বিতর্কিত মন্তব্য দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন বলেন, বিতর্কিত মন্তব্যে অবশ্যই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তবে আমি বলবো যার যার দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আরও দায়িত্ববান সতর্ক হয়ে কথা বলতে। কারণ কারো বক্তব্য বন্ধ করতে বলা সম্ভব না। তাই সতর্ক এবং সংযত হয়ে কথা বলাই ভালো।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো বিব্রতকর মন্তব্য আশা করে না। এ ধরনের মন্তব্যে আওয়ামী লীগ অবশ্যই বিরক্ত, বিব্রত। আওয়ামী লীগ জনগণের দল, সবসময় মানুষের কথাই চিন্তা করে। কিন্তু কেউ যদি বিতর্কিত মন্তব্য করে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেটা আসলে কাম্য নয়।

আরও পড়ুন