৭ ডিসেম্বর ২০২৫

বোয়ালখালীর লিলির সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ, স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ

দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী প্রতিনিধি »

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ৫ কানি (২ একর) জমি বর্গা নিয়ে সরিষা চাষ করেছেন লিলি আকতার। হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে লিলির সরিষা ক্ষেত। উঠছে মৌমাছি। এ ক্ষেতের পাশে বসিয়েছে মৌবক্স। এতে সরিষার চাষের পাশাপাশি সংগ্রহ করা হচ্ছে সরিষা ফুলের মধুও।

উপজেলার আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়নে চোখ জুড়ানো লিলি আকতারের এ সরিষা ক্ষেত। সরিষা খেতের পাশে মৌ চাষ করায় মধু সংগ্রহের পাশাপাশি বাড়বে ফলন।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে সারি সারি করে বসানো হয়েছে মৌ চাকের বক্স।

লিলি আকতার সরিষা ছাড়াও করেছেন শাক-সবজির চাষ। তার এক মেয়ে তাহেরা আকতার মায়েশা। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী দেলোয়ার হোসেন একজন কৃষক। তিনিও লিলিকে কাজে সহায়তা করেন।

সরিষা চাষী লিলি আকতার বলেন, দুই একর জায়গায় সরিষার আবাদ করেছি। পাশাপাশি মধু সংগ্রহের জন্য চারটি মৌ বক্স বসিয়েছি। এতে ৩০ থেকে ৪০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যাবে। প্রতি কেজি মধু ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছি। প্রতি কানিতে (৪০ শতক) ৫ থেকে ৬ মণ সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী তিনি। প্রতি মণ সরিষা ৪-৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। এ বছর সরিষা আবাদে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে এবার প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হেক্টর। এবার বোয়ালখালী পৌরসভাসহ উপজেলার সরোয়াতলী, জৈষ্ঠ্যপুরা, আমুচিয়া, চরণদ্বীপ ও করলডেঙ্গায় সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও প্রদর্শনী সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সেচ ও অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

সারোয়াতলীর কৃষক মো. সেলিম জানান, তিনি চার বছর ধরে সরিষার আবাদ করে আসছেন। পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে তিনি এ সরিষার আবাদ করেন। এবারো ৪০ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লক্ষণ কারণ ও আবুল বশর জানান, বোয়ালখালীতে সরিষার জাত বারি সরিষা ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও বিনা সরিষা ৯ এবং ৪ এর চাষ হয়েছে। লিলি আকতার মৌ চাষ করে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন। মৌমাছি সরিষার পরাগায়ণে পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করে। এতে সরিষার ফলন ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। সাড়ে তিন কেজি সরিষা থেকে ১ লিটার তৈল উৎপাদন করা যায়। সরিষা রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল জাতীয় ফসল সরিষা, সূর্যমুখি, সয়াবিন তিল উদপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নাই। সেই লক্ষে বোয়ালখালী পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে । যা গত বছরের তুলনায় ২০ হেক্টর বেশি। রাজস্ব প্রদর্শনী বিনামূল্যে বীজ সার সহায়তা ও প্রণোদনার আওতায় প্রদান করায় আবাদ বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়বে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন