১১ নভেম্বর ২০২৫

ব্যবসার ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন হাটহাজারীর মেজবাহ

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

হাটহাজারীর মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪২)। কখনো বিদেশি জাহাজ, কখনো অন্যের জমি নিজের বলে বিক্রি করেছেন তিনি। আবার কখনো ডায়মন্ড এর লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্যে বেতন দিয়ে রেখেছেন ২০-২৫ জন লোক। অন্তত ২২টি প্রতারনার মামলা খেয়ে ১১টির পরোয়ানা কাঁধে নিয়েই ঘুরছিলেন তিনি। তাকে যেন কেউ খুঁজে না পায়- সেজন্য ঘন ঘন পরিবর্তন করতেন সিমকার্ড। এমনকি করেছেন হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও। অবশেষে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা প্রতারক মেজবাহকে ধরেছে র‌্যাব-৭।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চটগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।

গ্রেফতার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী হাটহাজারীর কাটিয়াহাট এলাকার আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে।

এর আগে রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকার আজাদ কমিউনিটি সেন্টার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ‘২০১৫ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য শত কোটি টাকার একটি পুরোনো জাহাজ আনে খাজা শিপইয়ার্ড। এই জাহাজটিসহ এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। কেউ খবর নিতে গেলে যেন তার পক্ষে তথ্য দেয় এমন ২০-২৫ জন লোককে মাসিক বেতন দিয়ে নিয়োগ দেয় মেজবাহ। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে গেলে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকেরা তার ব্যবসার সব তথ্য ঠিক বলে তথ্য দিত।’

তিনি বলেন, ‘এভাবে সে আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইব্রাহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’

কর্নেল ইউসুফ আরও বলেন, ‘মেজবাহ বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার দেখিয়ে প্রচার করে একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছে যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকা জব্দ করেছে। এছাড়াও সে ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী মহোদয় এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভাগ দিতে হবে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শোনাত। এছাড়া একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে ভুক্তভোগীদের আগে থেকে রাখা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা দিয়ে নাজেহাল করতো। মিথ্যে মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতো না।’

গ্রেফতার মেজবাহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এছাড়া তাকে যেন সহজে কেউ খুঁজে না পায়, সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতো সে। এছাড়া তার সিমকার্ড ঘন ঘন পরিবর্তন করতো। এমনকি হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও করেছে।

র‍্যাব জানায়, মেজবাহ’র বিরুদ্ধে হাটহাজারী এবং কোতয়ালী থানায় বিভিন্ন প্রতারণার ২২টি মামলা পাওয়া যায়। যার মধ্যে আদালত কর্তৃক ১১টি মামলাতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। বাকী মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

গ্রেফতার আসামি এবং উদ্ধার আলামত পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাধারা/এসআরটি/আরএইচআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ