২৪ অক্টোবর ২০২৫

ব্যস্ততা নেই ঢাক-ঢোল তৈরির, অলস সময় কাটছে কারিগরদের

ঘনিয়ে এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গাপূজায় ঢাক-ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে পূজামণ্ডপগুলো। এই পূজার আরতিতে এবং মন্ত্রপাঠের সময় ঢোল ও ঢাকের বিকল্প নেই। আর সে কারণে পূজার আগে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগরদের।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চণ্ডিতীর্থ মেধস মুণির আশ্রম থেকে শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ বছরের শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।

মণ্ডপে পূজার সময় বিশেষ করে সন্ধ্যা আরতিতে প্রয়োজন হয় ঢাক-ঢোল। তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাদ্যযন্ত্রের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, ঢাক-ঢোলের জন্য খোল তৈরি, রং করা, চামড়া লাগানো এবং পুরোনো ঢাক-ঢোল মেরামত ও তৈরি করছেন বাদ্যযন্ত্র কারিগররা। গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে পৌরসভার গোমদণ্ডী ফুলতল এলাকায় কথা হয় ঢোল প্রস্তুত কারিগর সহদেব মণি দাসের সাথে। তিনি গত ১০ বছর ধরে বোয়ালখালীতে বাদ্যযন্ত্র মেরামতের কাজ করছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার চাষাভাদ্রা গ্রামে। তার সাথে বাদ্যযন্ত্র মেরামতের কাজ করেন ছোট ভাই জয়দেব দাস।

সহদেব মণি দাস বলেন, আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কারণে উৎসব-অনুষ্ঠানে এখন ঢোলের কদর অনেকটা কমে গেছে। তবে পূজা-পার্বনে এখনও ঢাক-ঢোলের কদর রয়েছে। পূজার আরতিতে ঢাক-ঢোলের কোনো বিকল্প নেই। তাই বছরের এ সময়টাতে ব্যস্ত সময় পার করেন ঢুলি থেকে শুরু করে ঢোল-খোলের কারিগররা। পূজা ছাড়াও বিভিন্ন লোকসঙ্গীতের অন্যতম বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে ঢাক-ঢোল।

তিনি বলেন, এক সময় ঢাক-ঢোলের কারিগররা বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও আগের মতো সেই ব্যস্ততা দেখা যায় না। সময়ের প্রয়োজনে অনেকেই পাল্টে নিয়েছে পূর্ব পুরুষের এ পেশা। কিছু কারিগর তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ কাঠের দাম, মজুরি, চাহিদা কমে যাওয়া এবং ইলেকট্রনিক্স বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এ ঢোল তৈরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কারিগররা।

এসব বাদ্যযন্ত্রের দোকানিরা বলছেন, ব্যবসা কোনো রকম টিকিয়ে রেখেছি। চামড়া ও গাছের দাম বেশি।পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এছাড়া কারিগরদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হয়। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না পেরে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।

বাদ্যযন্ত্রের দোকানিরা বলেন, ‘অন্যান্য বছর পূজার ১ মাস আগে থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢুলিরা ঢাক মেরামত ও বানাতে আসত। সবাই তাড়াতাড়ি নিতে তাগিদ দিত। এখন অবশ্য কারো তেমন তাড়াহুড়া নেই। ঢাকের কারিগরদের জীবন কাটছে চরম দুর্দশায়। আগে একটি ঢোল বিক্রি হতো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। আর বর্তমানে এ ঢোল বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। বর্তমানে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রে বাজার সয়লাব।

তিনি আরো বলেন, ‘একসময় ভালো আবস্থা থাকলেও বর্তমানে এ পেশায় সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়ের লেখা পড়ার খরচতো দূরের কথা, জোটেনা পূজা পার্বণে ছেলেমেয়ের জন্য নতুন কাপড় কিংবা মিস্টি মুখ করার মত টাকা পয়সা।’

এ বিষয়ে বোয়ালখালী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস  বলেন, “ঢাকের বোলে জগৎ জননী মায়ের পূজা আনন্দময় হয়ে উঠে। পূজায় ষোল কলা পূর্ণ করতে ঢাক বা ঢোলের কোন বিকল্প নেই।’

আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকঢোলসহ আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আরও পড়ুন