মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
দেশে এই প্রথম তৈরি হচ্ছে রিভারভিউ সড়ক। যা অনেকটা নির্মিত হচ্ছে ব্যাংককের রিভারভিউর আদলে। নগরীর জলবদ্ধতা দূরীকরণসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার টার্গেট নিয়ে চলছে সড়কের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে নয়নাভিরাম চারলেন সড়ক।
এছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে কর্ণফুলী দ্বিতীয় সেতুর মাধ্যমে এ সড়কের সংযোগ হবে। ফলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পর্যন্ত স্বল্প সময়ে পৌছাতে যাত্রীদের বেগ পেতে হবে না। যা শেষ পর্যন্ত পতেঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এমনকি এ সড়ক বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে যুক্ত করার পর যুগান্তকারী ফল ভোগ করবে শহরের মানুষ। ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা সরকারি অর্থায়নে এ সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১২টি স্লুইচগেটসহ প্রায় ৯০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ডিসেম্বর নাগাদ শতভাগ শেষ হবে।
চউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম উন্নয়নের অন্যতম প্রকল্প হিসাবে এটিকে অনুমোদন দেন। ভৌত ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় চউক। সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে চউক। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরুর কথা থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে নির্মাণ শুরু হয়েছে ঠিকাদারি চুক্তি ও অবকাঠামোগত রিপোর্ট বিলম্বের কারণে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সড়কটির নির্মাণ শেষ করার কথা থাকলেও সাময়িক অসুবিধার কারণে সময় বৃদ্ধি হয়ে তা ডিসেম্ব পর্যন্ত গড়াতে পারে। এ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে । সরকারি জায়গা ছাড়াও অধিগ্রহণে প্রায় ব্যয় হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা।

প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি ৩০ ফুট উচ্চতায় নির্মিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে এটি শহর রক্ষা বাঁধ হিসাবেও কাজ করবে। প্রায় ৯০ ফুট প্রশস্ত এ সড়কটিকে চারলেনে বিভক্ত করে যান চলাচলের দ্রুততা নিশ্চিত করা হবে। সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে সাড়ে ৬৯ হেক্টর। ১২টি জলাধারের জন্য আরও ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। সড়কের নিচ দিয়ে ১২টি রেগুলেটর নির্মাণের পাশাপাশি এসব রেগুলেটরকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ১২টি পাম্প হাউসও নির্মাণ করা হবে। চউক অধ্যাদেশের ৭৪ ও ৭৫ ধারা অনুযায়ী এ সাড়ে আট কিলোমিটার রাস্তার জন্য চউক সরাসরি ভূমি ও স্থাপনা মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া চলমান রেখে প্রকল্পটি দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করছে। সাড়ে ৮ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ৬ কিলোমিটার অংশে মাটি ভরাটের কাজ শেষ পর্যায়ে।

এ ব্যাপারে চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বাংলাধারাকে বলেন, চারলেনের এ সড়কটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য স্বল্প সময়ে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌছাতে সহায়ক হবে। জমি অধিগ্রহণে সাময়িক অসুবিধার কারণে এ সড়ক নির্মাণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এ সড়কটি দ্বিমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। একদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন, অন্যদিকে চাক্তাই থেকে চালুরঘাট পর্যন্ত যানজট নিরসন হবে।

এ রাস্তাটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু হয়ে বোয়ালখালী ও পটিয়ার সঙ্গে স্বল্প সময়ে যাতায়াতের সুবিধা পাওয়া যাবে। বর্তমান কালুরঘাট ব্রিজ থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত কোন বাঁধ ও স্লুইচগেট না থাকায় অতি বৃষ্টি ও সমুদ্রের জোয়ারের পানি নালা ও খাল দিয়ে ঢুকে নগরীতে আটকা পড়ে। এ সড়ক নির্মাণে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা নির্ধারণ করে কাজ চলছে অশ্বের গতিতে। ১২টি বিভিন্ন সাইজের রেগুলেটর (পাম্প হাউসসহ) নির্মাণ করা হচ্ছে এ সড়কের নিচ দিয়ে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হলে বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট সেতু হয়ে এবং বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ হয়ে কক্সবাজার যাতায়াতের সুবিধা অর্জন করবে যাত্রীরা। অপরদিকে, শহর ও উপকূলীয় বাঁধের মধ্যবর্তী এলাকাসমূহের উন্নয়ন এ সড়কের সঙ্গে অনেকটা সম্পৃক্ত। জনগণের আবাসন, ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য ও পর্যটকদের পর্যটন শিল্পকে উৎসাহিত করে দেশি বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট করবে এ সড়ক। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে চট্টগ্রাম শহরের দুঃখ চাক্তাই খাল এমনকি দেশের অন্যতম বাণিজ্যপাড়া খাতুনগঞ্জকে ঘিরে গড়ে উঠবে ভারী শিল্প এলাকা কালুরঘাট।
এ ব্যাপারে রিভার ভিউ সড়কের প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলী রাজিব দাশ বাংলাধারাকে বলেন, এ সড়কের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। শতভাগ সুবিধা ভোগ করবে ব্যবহারকারীরা। চারলেন এ সড়কটি হবে নয়নাভিরাম। দেশে এই প্রথম কোন নদীর তীর ঘেঁষে চারলেন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













