বান্দরবান প্রতিনিধি »
বান্দরবানে চলাচলের সুবিধার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তিতে রুপ নিয়েছে সেতুটি। নিরুপায় হয়ে যাতায়াতের জন্য পাড়াবাসীদের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা হয় বাঁশের পাটাতন দিয়ে সংযোগ সড়ক।
এটি বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কেংড়াছড়ি পাড়া এলাকায় কেংড়াছড়ি খালের উপর নির্মিত সংযোগ সড়কবিহীন একটি সেতুর চিত্র এটি। যেটি ব্রিজ থাকলেও নাই কোন যাতায়াতের সড়ক। সড়ক ছাড়া কিভাবে ব্রিজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে— এমন কাজ দেখে হতবাক পাড়াবাসী।
এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী কাজ না করে শুধু মাত্র সেতুর পশ্চিম পাশে কোন রুপ গাইড ওয়াল দেননি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। একদিকে মাটি ভরাট করে দায় সারিয়ে অফিস ম্যানেজ করে কাজের সম্পূর্ণ বিল উঠিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার মো. আরিফ। যা বৃষ্টির পানিতে অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে সেদিকেও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সেতুটির দৈর্ঘ ৫০ ফিট ও প্রস্থ ১০ফিট ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি খালের উপর নির্মিত হয়। কেংড়াছড়ি পাড়ায় ৬০ পরিবারের তিনশ পরিবারকে ভোগান্তি কমাতে ব্রিজটি নির্মিত করে দেওয়া হয়। কিন্তু তিন বছর পরেও কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় পাড়াবাসীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে সেতুটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের কেংড়াছড়ি পাড়ায় ৬০ পরিবারের বসবাস। এদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও রয়েছে অর্ধশত। বর্ষাকালে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি না থাকায় সেতুর নিচ দিয়ে হেঁটে পারাপার হয়ে স্কুলে যাতে হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এখন বর্ষায় খালে পানি বেশি হলে হেটে পার হতে পারে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত অসম্পূর্ণ সংযোগ সড়ক বিহীন এই সেতুটি দু’বছর যাবত দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দের রাজবিলার কেংড়াছড়ি খালের উপর ঠিকাদার মো. আরিফ সেতুটি নির্মাণ করেছিল।
পাড়ার ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বৃষ্টি বেশি হলে অনেক দিন স্কুলেও যাওয়া যায় না। তাই পাড়াবাসী মিলে সেতুতে উঠার জন্য বাঁশের বেড়া দিয়ে সংযোগ তৈরি করেছে।
পার্শ্ববর্তী পাড়ার ধর্ম চরণ তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) জানান, বর্ষায় খালটি পারাপার হতে অনেক সমস্যা হয়। উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত অসম্পূর্ণ সংযোগ সড়কবিহীন এই সেতুটি দুবছর যাবৎ দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই পাড়াবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সেতুটি ব্যবহার করতে বাঁশের বেড়া দিয়ে পাটাতন তৈরি করেছে খালটি পারাপারের জন্য।
রাজবিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্যু অং প্রু জানান, কেংড়াছড়ি খালের উপর সংযোগ সড়কবিহীন উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। এ নিয়ে উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যা’র সত্ত্বাধিকারী রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তার লাইসেন্সে ৪০ লাখ টাকা উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দে রাজবিলার কেংড়াছড়ি খালের উপর ঠিকাদার মো. আরিফ সেতুটি নির্মাণ করেছিল। কাজ শেষ হওয়ার ফাইনাল বিলও উত্তোলন করা হয়েছে। জামানত উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোমনাথ চৌধুরীর বলেন, ‘এ ব্যপারে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করেন।’ এছাড়া তিনি ওই প্রকল্পের দ্বায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও প্রকল্প ব্যয় ও কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ সেতু নির্মাণ কাজ করেছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত জানান, স্থানীয়রা প্রথমে একটি কালভার্ট চেয়েছিল পরে পর্যবেক্ষণ করে ব্রিজের অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় ঠিকাদারকে ৪০ লাখ টাকার সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হয়।
তিনি আরও জানান, সংযোগ সড়কের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে আরও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
