৬ নভেম্বর ২০২৫

ভারমুক্ত হলেন ফরিদ, সম্পাদকে বহাল মুজিব—হতাশ কাউন্সিল প্রত্যাশীরা

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার প্রতিনিধি »

এবারও বহুল প্রত্যাশিত কাউন্সিল হলোনা। সাত বছর পূর্বের মতো এবারো আগামী ৩ বছরের জন্য কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কান্ডারি নির্ধারণ করে সভাপতি-সম্পাদক ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। আগের কমিটির মেয়াদ ৭ বছর পূর্ণ হবার শেষ প্রান্তে এসে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের  ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শেষে চলমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ।

এসময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে পরাজয় বরণ করা চারবারের সাংসদ মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য করা হয়েছে। ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী এতদিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়,  এবারের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে যারা নেতৃত্বে আসতে চেয়েছিলেন তাদের আবেদন নিয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়। চলমান সময়, আগামী নির্বাচন সবকিছু বিবেচনা করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফরিদ-মুজিব কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে।

ফরিদ-মুজিবের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, গেল ৭ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে সন্তুষ্ট হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর পক্ষে কাজ করা এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে নির্বাচন পরবর্তী সাক্ষাতেই ভাগ্য বদলে গেছে ফরিদ ও মুজিবের।

গত সাত বছরে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে মেয়র মুজিবের উপর হাইকমান্ড তিক্ত-বিরক্ত হলেও শেষ সময়ে এসে দলীয় কর্মকান্ডে নিজেকে দলের জন্য অপরিহার্য্য হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন মুজিব ও ফরিদ। ফলে, অতীত ভুলে পুরোনোদের উপরই ভরসা করেছেন দলের হাইকমান্ড। এছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জেলা অধীন কক্সবাজার সদর উপজেলা, কক্সবাজার পৌরসভা, ঈদগাঁও, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরীসহ মোট  ১১টি সাংগঠনিক উপজেলার মাঝে ১০টি সম্মেলন সম্পন্ন করতে পেরেছেন তারা। এই কারণে এই দুইজনকে চিনেন সকল নেতাকর্মীরা। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগের কঠিন সময়টি রাজনৈতিকভাবে পাড়ি দিতে ফের তাদের উপরেই ভরসা করেছে কেন্দ্র।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের দেয়া তথ্য থেকে আরো জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারী সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এর ৬ বছর ১০ মাস পর  ১৩ ডিসেম্বর সোমবাল বেলা পৌণে ১২ টায়  সমুদ্র শহরের মোটেল রোডের লাবনী পয়েন্টের শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলন উদ্ধোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপিকে না চিনলে সে কবরস্থানও চিনে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা হত্যা-খুন, লুটপাটের রাজনীতি করে। তাই যে হাতে তারা (বিএনপি) আক্রমন করতে আসবে সে হাত ভেঙে দিবেন। যেন আর আক্রমন করতে না পারে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ স্বাধীনতার সুস্পষ্ট ঘোষণা। এরপর থেকে বাঙ্গালী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বয়সের ভারে বীর মুক্তিযোদ্ধারা একে একে মারা যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ আছে, থাকবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব উন্নয়নের এই বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে এটা সম্ভব হয়েছে। দেশের উন্নয়ন শান্তির জন্য শেখ হাসিনার কোন বিকল্প হয়ে উঠেনি।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্সুয়ালি যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সুপার ফ্লপ, তারা পাগল হয়ে গেছে, এখন বেপরোয়া আচরণ করছে। ১০ ডিসেম্বর টার্গেট মিস করেছে- কোয়ার্টার ফাইনালে আমরাই গোল দিয়েছি। সেমিফাইনালেও আমরা গোল করবো; ফাইনালেও আমরাই জিতবো। ফাইনাল খেলা মানে আগামীর নির্বাচন, সেখানে আমরা জিতবোই। কক্সবাজারবাসী তৈরি হউন, খেলা হবে। ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে বলে তিনি আরো বলেন, আ’লীগের নেতারা কে কি করেন দেশের মানুষ সব জানে। ক্ষমতায় আছেন বলে মানুষ কিছু বলেনা। দলের নাম ভাঙিয়ে যেনো কেউ অপকর্ম না করে, দলের বদনাম হয় এমন কোনো কাজ যেনো কেউ না করে।

মাস্টার মাইন্ড জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু খুনীদের পুরস্কৃত করেছেন দাবী করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যার শিকার না হলে পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করতে কেউ সাহস পেতো না। শেখ হাসিনার হাতেই দেশ এগুচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ চলছে।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আহমদ স্বপন,  ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সুজিত রায় নন্দি, আমিনুল ইসলাম আমিন, কক্সবাজার-১ আসনের সাংসদ জাফর আলম, মহেশখালীর সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার সদর আসনের সাইমুম সরোয়ার কমল, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কুতুবদিয়া সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবরসহঅনেকে।

জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর এম এ মনজুরের সঞ্চালনায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত ও  স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।

এদিকে, এত প্রতিক্ষার পরও কাউন্সিলে নেতা নির্বাচন না হওয়ায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা। তাদের মতে, এভাবে কেন্দ্র থেকে কমিটি মনোনয়ন হওয়া যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রতিবন্ধক। দায়িত্বপ্রাপ্তরা ‘মাইম্যান’ তৈরীতে ব্যস্ত হওয়ায় ত্যাগী ও তৃণমূল স্তম্বিত থাকে।

দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সম্মেলন উপলক্ষ্যে সকাল ১০ টা হতে মিছিলে মিছিলে হাজারো নেতা কর্মী সম্মেলন স্থলে আসতে শুরু করে। প্রধান অতথিরি বক্তব্যের আগমূহুর্ত পর্যন্ত মিছিল আসা অব্যাহত ছিলো।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ