ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে। সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠিত গোপন বৈঠকের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গতিশীলতা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও তার মিত্রদের মধ্যে যে ধোঁয়াশা ছিল, তা অনেকটাই পরিষ্কান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ফলে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম উত্তরজেলায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের তৎপরতা বেড়েছে কয়েকগুণ। জেলা জুড়ে সভা-মিছিল, কৌশল বিনিময় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে চলছে দৌড়ঝাঁপ। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসন ব্যতীত বাকি পাঁচটি আসনেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এর ফলে দলীয় কোন্দল বাড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন, যার সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকা জামায়াত ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার কয়েকটি আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলীয় প্রার্থীকে ঘিরে মাঠপর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)
মিরসরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম ১ আসন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরো রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে ছিলেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, ক্লিপটন গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রফেসর এমডি কামাল উদ্দিন চৌধুরীর ছোট ভাই বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও বড়তাকিয়া গ্রুপের কর্ণধার মনিরুল ইসলাম ইউসুফ।
চট্টগ্রাম-২(ফটিকছড়ি)
ফটিকছড়ি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন পিজিআরের সাবেক প্রধান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
তাঁর পাশাপাশি মনোনয়ন চাইছেন উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়জী এবং উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছালাউদ্দিন ও সরোয়ার আলমগীর।
এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) মহাসচিব এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী। নিজ এলাকা ফটিকছড়ি থেকে তিনিও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলে জানা গেছে।
তবে এ আসনে সবচেয়ে বেশি চর্চিত নাম বিএনপির প্রয়াত নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, তার মৃত্যুর পর আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি হয়তো তার পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দিতেও পারে।
চট্টগ্রাম-৩(সন্দ্বীপ)
চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৩ আসন। এই আসনে বিএনপি মনোনীত দু বারের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা ও বিনপির জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান ভূইয়া মিলন্টন আছেন বেশ আলোচনায়। এছাড়াও মনোনয়ন পেতে মাঠে দৌড়ঝাঁপ করছেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইন্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন ও সাবেক ছাত্র নেতা রাফি উদ্দীন ফয়সাল।
চট্টগ্রাম-৪(সীতাকুণ্ড)
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রার্থী হিসেবে এককভাবে বিবেচিত হচ্ছেন দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী। তার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে এখনো পর্যন্ত আর কারো নাম শোনা যাচ্ছে না।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার প্রার্থিতা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। বরং তাকে ঘিরেই ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দলের ভেতর ঐক্যমতের এই অবস্থান সীতাকুণ্ডে বিএনপির নির্বাচনী পরিকল্পনাকে আরও সুসংহত করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
চট্টগ্রাম-৫(হাটহাজারী)
এ আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এবং দলে মীর হেলালের অবস্থানও বেশ ভালো বলে শুনা যাচ্ছে। এছাড়াও রয়েছেনে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ও সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা।
চট্টগ্রাম-৬(রাউজান)
এ আসনে নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে ছিলেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিকদার।
চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম উত্তরজেলার ছয়টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩১ জন। নির্বাচনের প্রাক্কালে মাঠের সমীকরণ কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণ ও জোটগত সমন্বয়ের ওপর।
বাংলাধারা/২০২৫