কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের রামুর রশিদনগর পানিরছড়া এলাকায় ধর্মকে ঢাল বানিয়ে মসজিদের নাম দিয়ে প্রভাবশালী চক্র এক প্রবাসীর খতিয়ানি জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে তারা।
ভুক্তভোগী প্রবাসী গিয়াস উদ্দিনের বোন সামিনা ইয়াসমিন জানান, আমাদের জমিতে নির্মাণ কাজ শুরুর পর প্যানেল চেয়ারম্যান ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক মাছুমসহ ভূমিদস্যু প্রভাবশালী মহল মসজিদের নামে চাঁদা দাবি করেন। অপারগতা জানালে জমিটি মসজিদের বলে প্রচার ও দখলের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আইনি জটিলতায় জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে লোক ভাড়া করে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে ভূমি দস্যু চক্রটি।
চাঁদা দাবি ও ভাংচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী সামিনা ইয়াসমিন অভিযুক্তদের আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৩৩২/২১)। আসামীরা জামিনে নিয়ে আবারো হামলা চালায় এবং আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে রামু থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করো হয়, স্থানীয় আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুল বারীর কাছ থেকে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ সালে ১০৫/২ নং খতিয়ান থেকে সাড়ে ৮ কড়া জমি ক্রয় করেন সামিনা ইয়াসমিনের ভাই গিয়াস উদ্দিন। জমিটির নামজারি খতিয়ান নং-৩২৫৩। নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করা হচ্ছে। গত ২২ নভেম্বর ২০২১ অর্থ সংকটের কারনে অর্ধেক জমি খালি রেখে বাকি অর্ধেক জমিতে মার্কেট নির্মাণ কাজ শুরু করেন তারা।
এ সময় রামুর রশিদনর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও শাহনুরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক মাছুম, আব্দুরর রহমানের ছেলে আব্দুল গণি, আবু শামার ছেলে রহিম মিয়া, মো. সিকান্দরের ছেলে জাফর আলম, কাদের মিয়ার ছেলে মো. শফি, সিকান্দরের ছেলে হানিফা, আব্দুল হামিদ ও কয়েকজন মিলে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নির্মাণাধীন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করেন।
এই ঘটনায় সামিনা ইয়াসমিন গত ২৯ নভেম্বর ২০২১ সালে ৯ জনের নাম দিয়ে ও ৬ জনকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ফৌজদারি দরখাস্ত দেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য রামু উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আব্দুর রহিম বাট্টুর দুই ছেলে গিয়াস উদ্দিন ও জয়নাল আবেদীন, আব্দুর রহিম বাট্টু ও ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন জাকুসহ কয়েকজন মিলে আবারো হামলা চালিয়ে লুটপাট ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এঘটনায় ভুক্তভোগী ইয়াসমিন নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরীর আবেদন জমা দেন। অজ্ঞাত কারনে অভিযোগ তদন্ত না করে বসে সমাধান করার তাগিদ দেন রামু থানার পরিদর্শক তদন্ত। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট থানায় উভয়পক্ষের বৈঠকে বিবাদীরা ওই জায়গার পরিবর্তে অন্য জায়গায় জমি দিবে বলে জানান। বিপরীতে ভুক্তভোগীরা জানান, যদি এই জমি কাগজে মসজিদ কমিটি পেয়ে থাকে অন্য জমি না নিয়ে মসজিদের নামে দান করে দিবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে ভূমিদস্যু চক্রটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোন কাগজপত্র ছাড়া কি মূলে আমাদের কেনা জমি দখলের চেষ্টা করছে বুঝতেছি না। তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে গ্রামের অবুঝ মুসল্লিদের মিথ্যে বুঝিয়ে মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের জমিটি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। মূলত জমিটি মসজিদের নিকটস্থ এবং জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রভাবশালী মহলটি ধর্মকে ঢাল বানিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে নিজেদের দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রশিদনগর ইউনিয়ের প্যানেল চেয়ারম্যান ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক মাছুম বলেন, এটি আমাদের এজমালি সম্পত্তি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই জমিটি মসজিদের নামে দান করে গেছে। ১৯৮০ সাল থেকে জমিটি মসজিদের দখলে রয়েছে। ২০২০ সালে আমাদের এক চাচা থেকে প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন কিছু জমি ক্রয় করেন। মসজিদের জমিটি কিভাবে খতিয়ান জানিনা। তারা মনে করে জমিটি মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলের চেষ্টা করছি। মূলত মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জমিটি রক্ষার চেষ্টা করছি। এ কারনে তারা আমার নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি ও ভাঙচুরের মামলাও করেছে।
রামু থানার পরিদর্শক তদন্ত অরুপ কুমার চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিনের জটিল বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয়পক্ষ নিয়ে থানায় আমরা বৈঠক করেছি। গিয়াস পক্ষ বলেছেন জায়গাটি পূর্বে মসজিদের নামে উল্লেখ রয়েছে কাগজ দেখাতে পারলে দানপত্র করে দিবে। উভয় পক্ষকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি।