২৬ অক্টোবর ২০২৫

মহিউদ্দিন চৌধুরীর আদরের মেয়ে ‘টুম্পা’র মৃত্যুর ১২ বছর

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অতি আদরের মেয়ে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী টুম্পা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। টুম্পার মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারেননি মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেই দুঃখের কথা সব সময় বলতেন তিনি।

২০০৭ সালের ৭ মার্চ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করে ১/১১ এর সরকার। একুশ মাস বিনা বিচারে কাটাতে হয় কারাগারে। ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়ে তার পিতাকে মৃত্যুর আগে দেখে যেতে পারেন নি। আর পিতা মহিউদ্দিন চৌধুরীও দেখতে পারলেন না তার অতি আদরের মেয়ে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পাকে । কী নির্মম ঘটনা।

স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন ও বড় ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৭ অক্টোবর ব্যাংকক রওনা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসেই টুম্পার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। মেয়ের মৃত্যুর সময় পিতা হিসেবে তার সাথে থাকতে না পারার মানসিক যন্ত্রণার কথা সবসময় বলতেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মৃত্যুর আগে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে তাঁর মেয়ে লিখেছিলেন,‘আমি কখনো তোমাকে বলতে পারিনি, তুমি আমার কাছে কী! তোমার কাছে কোনো দিন মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনি। শুধু এটুকু বলতে পারি, যখন এ চিঠি লিখছি, আমার চোখ ছাপিয়ে পানি নামছে। আমি তো কখনো তোমাকে বলতে পারিনি তুমি শ্রেষ্ঠ বাবা, তুমি আমার আদর্শ।’

‘আব্বু, তোমাকে কি একটা প্রশ্ন করতে পারি? তুমি তো আল্লাহকে বিশ্বাস করো। একজন ভালো মানুষের সব গুণ তোমার মধ্যে আছে। তোমার ঈশ্বর কি সেটা দেখছেন না? তিনি কি দেখছেন না তুমি কী কষ্ট পাচ্ছ? এত কিছুর পর আমি কি আল্লাহর ওপর আস্থা রাখব? কিন্তু আমি রাখছি।

‘সেই সকালবেলাগুলো আজ খুব মিস করছি, যখন তুমি খুব ভোরবেলা উঠে ছড়া আবৃত্তি করতে…। আব্বু, তোমাকে আজ হাজারবার ডাকতে ইচ্ছা করছে…চিৎকার করে তোমাকে ডাকতে ইচ্ছা করছে।’

‘…লবণাক্ত অশ্রুর বিন্দু ছাড়া আমি আর তোমাকে কী দিতে পারি? যে কাগজটাতে লিখছি, সেটা আমি আর দেখতে পাচ্ছি না। আমার চোখের পানিতে কাগজটা ভিজে যাচ্ছে।’

‘তুমি আমার হৃদয়ের সবচেয়ে গভীরতম স্থানটিতে আছ, চিরকাল সেখানেই তুমি থাকবে।
—তোমার টুম্পা।’

একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মেয়ে হলেও টুম্পার জীবন ছিল সাদাসিধে। তার মধ্যে অহংবোধ ছিল না। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ছিলেন টুম্পা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, টুম্পা অনেক সাধাসিধে ছিল। তার বাবা মেয়র- এই বিষয়টি আমরা অনেকেই জানতাম না। এক-এগারোর সময় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হলে জানতে পারি টুম্পা তার মেয়ে।

ড. অনুপম সেন বলেন, টুম্পা তার মৃত্যুর আগে পিতার সঙ্গে শেষ দেখা করতে পারেনি। সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার টুম্পার বাবার প্রতি নির্দয় আচরণ করে। টুম্পাকে দেখার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। এমনকি তিনি মুক্তি পাওয়ার পরও ব্যাংককে যেতে সরকার তালবাহানা করে যাত্রা বিলম্বিত করেছিল। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসেই তিনি টুম্পার মৃত্যু সংবাদ পান। এটা শুধু মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য নয়, আমাদের সকলের জন্য একটি মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি।

বাংলাধারা/এফএস/ইরা 

আরও পড়ুন