চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন লালাখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
পাশাপাশি নবনির্মিত বাকলিয়া এক্সেস রোডটি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের প্রয়াত পিতা জানে আলম দোভাষের নামে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া পতেঙ্গা আউটার রিং রোডের একটি সংযোগ সড়ক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার নামে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৪৫৮ তম বোর্ড সভায় সবার সর্বস্মতিক্রমে নামকরণের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস।
তিনি বলেন, ‘বোর্ড সভায় নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। অনুমোদিত প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য।’
সিডিএ বোর্ড সদস্য অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী জানান, সিডিএর বাস্তবায়নাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামকরণ নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও প্রয়াত মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব করা হয়। এতে বোর্ড সদস্যরা সবাই একমত পোষণ করেন।
সিডিএ’র বোর্ড সদস্য জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, ‘অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। এসময়ের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন চট্টগ্রামে আসবেন, তখনই সেটি উদ্বোধন করবেন।’
নগরের লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, আগামী অক্টোবরে এই ওয়েতে যান চলাচল শুরুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে বাকলিয়া এক্সেস রোড ও আউটার রিং রোডের সংযোগ সড়কটি ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি গত ২০১৭ সালের ১১ জুলাই অনুমোদন হয়। ওই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। ২০২২ সালে নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর ফলে মোট নির্মাণব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা। যৌথভাবে নির্মাণকাজ পায় বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্কিন।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়াল সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আছে ২৪টি লুপ ও র্যাম্প এবং ৩৯০টি পিলার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে নিমতলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার কাজ শেষ। নিমতলা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত বাকি ৬ কিলোমিটারের মধ্যে এখন রেলিং-পাইলিং ও ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরার সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সাংসারিক জীবনে দুই ছেলে ও চার কন্যা সন্তানের জনক মহিউদ্দিন চৌধুরী নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করলেও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর মনোবল ও সাহস ছিল অটুট। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। টানা ১৭ বছর সিটি করপোরেশনকে সফলভাবে পরিচালনা করে নগরবাসীকে একটি আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে সক্ষম হন।
ছাত্রজীবন থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে পা বাড়ান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। কলেজ পড়ুয়া ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে প্রবীণ রাজনীতিক সকলের আস্থায় আজও দেদীপ্যমান মহিউদ্দিন চৌধুরী। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর চিরবিদায় নেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিনে নুর আহাম্মদ সড়কের নেভাল অ্যাভিনিউ মোড়ে লড়াই করতে গিয়ে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে পাহাড়ি এলাকা দিয়েই সদলবলে ঢুকে পড়েন দেশে। প্রাণপণ লড়াই করেন দেশমাতৃকার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের পর ক্রমেই শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন এ নেতা। ফিরে এসে চট্টগ্রামকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে এসে হারিয়ে ফেলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু মৌলভী সৈয়দকে। পরবর্তী দীর্ঘ সামরিক শাসনের সময় তাঁকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনসহ চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের স্বার্থরক্ষার আন্দোলন করেছেন তিনি।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এখন দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতন ও নানান ঘটনাপ্রবাহে চট্টলবীরে পরিণত হওয়া মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর নগরের একটি ক্লিনিকে ইন্তেকাল করেন।













