২৬ অক্টোবর ২০২৫

মহৎ রাজনৈতিক শিল্পী

আশরাফুন নুর »

একজন শিল্পী তাঁর চারপাশের পরিবেশ গভীরভাবে অবলোকন করেন। সুন্দরের দৃষ্টিতে দেখেন তাঁর আশপাশের পরিবেশকে। সৃষ্টি করেন শিল্প। তিনি সৃষ্টির লক্ষ্যে কোন কাজে অবহেলা করেন না। তিনি চান শুধু মানুষের কল্যাণ, শৈল্পিক-সুন্দর জীবন। আর এ জীবনকে তাঁর ক্যানভাসে তুলির আচঁড়ে ফুটিয়ে তুলেন। তখন তিনি হয়ে উঠেন একজন মহৎ শিল্পী। আর এ মহৎ শিল্পী হতে হলে শিল্প সৃষ্টিতে সফল হতে হয়। অনুরূপভাবে একজন রাজনীতিবিদও রাজনৈতিকশিল্পী হতে পারেন। যদি তিনি তার আশপাশের মানুষের সংস্কৃতি, ধর্ম-কর্মসহ সেই জগণের মনের কথা, ব্যাথা ও হালচাল গভীরভাবে অবলোকন করে তাদেরকে নিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারে এবং তাদের মন জয় করতে পারেন তবে তিনি একজন মহৎ রাজনৈতিকশিল্পী। আর রাজনীতিতে এমন একজন শিল্পীকে আমি দেখেছি তিনি হলেন চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী।

তিনি চট্টগ্রামের মানুষের অধিকার, সংস্কৃতি, ধর্ম ও কৃষ্টি-কালচার সবই বুঝতে চেষ্টা করেছেন এবং যে কোন সমস্যায় সমাধান করেই ছেড়েছেন। মানুষের অধিকারের বিষয়ে তিনি কখনো কারো সাথে আপস করেন নি। যে কারণে তাঁর প্রতি চট্টগ্রামের মানুষের এতো ভালোবাসা। যে ভালোবাসা এখনো আমরা দেখতে পাই তাঁর প্রতি চট্টগ্রামবাসীর আস্থা। মানুষ তাঁকে চিরকালই মনে রাখবে। তাই তিনি রাজনৈতিকশিল্পী। শুধু শিল্পীই নন সফল একজন মহৎ রাজনৈতিকশিল্পী।

আমি হয়ত এ রাজনৈতিকশিল্পীর সাথে কখনো কথা বলতে পারিনি, দেখাও হয়নি ওভাবে। তবে বিভিন্ন সমাবেশ, সভায় বক্তব্য শুনেছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কারণ তাঁর সম্পর্কে সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। এ পরিণত বয়সে তাঁকে অন্তত পক্ষে সমাবেশে দাঁড়িয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে। কিশোরকাল থেকেই এ চট্টলবীরের কথা শুনে আসছি গুরুজনদের কাছ থেকে। তখনে থেকেই অজান্তে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে আমার হৃদয়ে। এ পরিণত বয়েছে এসে এ ভালোবাসা আরও বেড়ে গেলো।

চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক কৌশল আমার কাছে সম্পূর্ণ আলাদা মনে হয়। যে কোন রাজনীতিবিদ তার নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ থাকে, থাকে দলের কিছু সীমাবদ্ধতা। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরীর বেলা তা ছিল একেবারে ভিন্ন। তিনি দল-মত সবকিছুর উর্ধে মানুষকে স্থান দিয়েছেন, মানুষের অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি সর্বপ্রথম চিন্তা করেছেন তাঁর আশপাশের মানুষের কথা। কখন পার্টি কি করবে সেদিকে তিনি তাকিয়ে থাকেন নি বরং তিনি যেকোনভাবে সামাধান করতে চেষ্টা করেছেন।

একজন সত্যিকারে রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি কর্ম ও ভালবাসা দিয়ে রাজনীতির তৃণমূল পর্যায়কে আলিঙ্গন করেছিলেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ।তাঁর শরীরের প্রতিটি রক্তকণায় ছিল রাজনৈতিক ধ্যানধারণা। টানা সতের বছর নগরপিতার আসনে আসিন ছিলেন। যেখানে অনিয়ম-অনাচার লক্ষ্য করেছেন সেখানেই তিনি দাঁড়িয়ে গেছেন এবং রুখে দিয়েছেন সকল ষড়যন্ত্র। তাইতো তিনি চট্টলবাসীর হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

সমাজ পরিচালনার দৃষ্টিভঙ্গিই হলো রাজনীতি। সমাজের শোষক ও শোষিত এ দুটি ভাগের মধ্যে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী আজীবন লড়েছেন শোষিতের পক্ষে, ছিলেন শ্রমজীবীর পক্ষে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে, এমনকি স্বাধীনতার পরেও বেশ কিছুদিন রাজনীতি একটি মহৎ কাজ হিসাবে বিবেচিত ছিল৷ রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন সমাজের চোখে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু এখন তার উল্টোটাই ঘটেছে কিছু রাজনীতিতে কিছু অপসংস্কৃতি প্রবেশ করার কারণে। এখন রাজনীতি মানে মারামারি, হানাহানি, ভাগবাটোয়া এসব। তাই বর্তমান মেধাবী ছাত্ররা এ ছাত্ররাজনীতি সড়ে দাঁড়িয়েছে। যদি অপসংস্কৃতি প্রতিরোধ করতে হয় তবে চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো আদর্শবান রাজনীতিবিদদের জীবন অনুসরণীয়।

আাজ (১৫ ডিসেম্বর) চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ বিজয়ের ডিসেম্বর মাসেই তাঁর জন্ম এবং এ মাসেই তাঁর মৃত্যু। এ মাসটি বাঙালি জাতির জীবনে বহুল তাৎপর্যবহ। এ মাসেই বাঙালি জাতি স্বাদ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের। মহিউদ্দিন চৌধুরীও ছিলেন লড়াকু এক মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধ করেননি, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বও দিয়েছেন। শৈশব ও কৈশোরকাল পরবর্তী যৌবনেই তিনি জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। পরে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে পাড়ি দিয়েছেন রাজনীতির মূল ধারার দীর্ঘ পথ। সক্ষম হয়েছেন চট্টলবাসীর হৃদয়মন জয় করতে। এ মহৎ রাজনৈতিকশিল্পীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

বাংলাধারা/এফএস/টিম/এএ

আরও পড়ুন