৬ নভেম্বর ২০২৫

‌‘মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখায় অভিযানকারিদের দেখেও ডাক দিতে পারিনি’

ফিল্মী স্টাইলে অপহরণ ও পাহাড়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ পেতে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে অপহরণকারিরা। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালানো বনকর্মী, বন পাহারাদলের সদস্য ও পুলিশকে কাছাকাছি দেখেও মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখায় ডাক দিতে পারেননি অপহরণের শিকার বন পাহারা দলের তিন সদস্য। এভাবে নিপীড়ন সইয়ে একপ্রকার অনাহারে থাকার প্রায় ৭৯ ঘন্টা পর জীবিত উদ্ধার হতে পেরে আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া ও অভিযানকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফে বন পাহারা দিতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়ে চারদিনের মাথায় গহীন পাহাড় থেকে উদ্ধার হওয়া তিন বনকর্মী।

তাদের উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল হতে দেশীয় তৈরি একনলা দুটি লম্বা বন্দুক ও ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধারসহ অপহরণ দলের এক সদস্যকেও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। সোমবার রাতে টেকনাফ থানায় প্রেস ব্রিফিং কালে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া-টেকনাফ সার্কেল) মুহাম্মদ রাসেল।

ব্রিফিংয়ে উদ্ধার হওয়া ভিকটিমদের একজন আব্দুর রহমান (৩৭) বলেন, বন পাহারাদলের সদস্য হিসেবে প্রতিদিনের রুটিন মতে আমরা দমদমিয়া পাহাড়ে হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ একদল অস্ত্রধারি এসে আমাদের তিনজনকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পাহাড়ে ভেতর নিয়ে যায়। মারধর করতে করতে আটকের পর মুক্তিপণ পেতে মধ্যযুগীয় কাদায় নির্যাতন শুরু করে। বাড়িতে কল করে প্রত্যেকজন থেকে ২০ লাখ করে ৬০ লাখ টাকা দাবি করে আসছিল তারা। আমাদের ঠিকমত খেতেও দেয়নি। তবে, নির্যাতনের মাত্রা কমায়নি। পুলিশ ও স্থানীয়রা আমাদের খোঁজে পাহাড়ে গেলে আমরা তাদের দেখতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু অপহরণকারিরা তখন আমাদের অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখায় ডাক দিতে পারিনি। এতে নিরবে চোখের জল ফেলেছি। সোমবার দুপুরের পর পুলিশ ও স্থানীয়রা পাহাড়ের চারপাশ ঘিরে রেখে অভিযান চালালে সন্ত্রাসীরা আমাদের রেখো পালিয়ে যান এবং তখনই তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করতে পারে।

উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের মাঝে অপর দুজন হলেন-টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে মোহাম্মদ শাকের (২৪) ও মৃত আবদুল শুক্কুরের ছেলে আব্দুর রহিম (৩২)। আর আব্দুর রহমান (৩৭) একই এলাকার মৃত বকসু মিয়ার ছেলে।

অভিযানে অপরাধী চক্রের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত গ্রেফতার মো. ফয়সাল (৩০) মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়ার বাসিন্দা।

উখিয়া-টেকনাফের(সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেন, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) তিন বন কর্মী দমদমিয়া নেচার্র পার্ক সংলগ্ন পাহাড়ে দায়িত্ব পালন করছিল। হঠাৎ ১০-১৫ জনের একটি ডাকাতদল তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। অপহরণের পর থেকে আমরা একাধিকবার পাহাড়ে ভেতর অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালীন সোমবার বেলা ৩টার দিকে গহীন পাহাড়ে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌছি তখন ডাকাতদল পুলিশের উপর গুলি বর্ষণ করেন।এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি বর্ষণ করলে, ডাকাতদল অপহৃত তিন ভিকটিমকে রেখে পালিয়ে যায়। পরে আমরা ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দু’টি একনলা দেশিয় তৈরি বন্দুক ও ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্বার করি।

টেকনাফ উপজেলা আ’লীগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুল বশর বলেন, তিন বনকর্মীর অপহরণের পর থেকে তাদের পরিবারের মাঝে আতংকের ছায়া নেমে এসেছিল। দীর্ঘ ৭৯ ঘন্টা বন বিভাগ, সিপিজি ও স্থানীদের সহযোগিতায় পুলিশ তাদের গহীন পাহাড় থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, দীর্ঘ ৭৯ ঘন্টা প্রচেষ্টার পর অপহৃত তিন বনকর্মীকে গহীন পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের এক সদস্যকেও আটক করা হয়।

অভিযান কালে ডাকাতের আস্তানা থেকে দুটি দেশীয় তৈরি একনলা লম্বা বন্দুক ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমদের আদালতের মাধ্যমে জবানবন্দি নিয়ে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে ওসি জানায়।

এরআগে গত শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর টেকনাফ দমদমিয়া নের্চার পার্ক সংলগ্ন পাহাড়ে তিন বন কর্মী আব্দুর রহমান, শাকের আলী ও আব্দুর রহিম তারা অপহরণের শিকার হয়েছিল।এরপর থেকে অপহরণ কারীরা তাদের পরিবার থেকে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করছিল।

উল্লেখ্য, টেকনাফ উপজেলায় এ পর্যন্ত শতাধিক অপহরণের ঘটনায় দেড় শতাধিক লোক অপহরণকারীর কবলে পড়েছেন।যারা ফেরত আসতে পারছেন তারা প্রত্যেকে মুক্তিপন দিয়েছেন। এবং মুক্তিপন দিতে না পেরে এক টমটম (ইজিবাইক)চালকসহ ৬ জন খুন হয়েছেন। সবর্শেষ অপহৃত তিন বন কর্মী অপহরণের ৪দিনের মাথায় সোমবার তাদের গহীন পাহাড় ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ