জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »
কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ায় একটি চিহ্নিত পরিবারের মাদক বিকিকিনির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জেরে এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় আহত হয়ে ৫দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১২ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ৭ জুলাই রাত ১১টাকার দিকে খরুলিয়া বাজারপাড়া গ্রামে সড়কের উপর থেকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। মারা যাবার আগে কারা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে সব জানিয়ে দিয়েছেন নিহত জামাল।
নিহত জামাল উদ্দিন (৩৫) খরুলিয়া বাজারপাড়া গ্রামের মৃত ফজল কবিরের ছেলে।
মৃত জামালের ভাই কামাল হোসেন ও বোন খুরশিদা জানান, চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় জামালের যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন কিভাবে সে আক্রান্ত হয়েছে তা বলেছে। জামাল জানিয়েছেন, মাস দেড়েক আগে খরুলিয়া বাজারপাড়া এলাকার মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত ইউসুফ আলীর ছেলে শওকত আলী পুতু তাকে টাকা পাচ্ছে বলে গালিগালাজ করে। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা এবং একপর্যায়ে হাতাহাতিও হয়। সেদিন জামালকে ধরে বেঁধে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিসহ আটক করে রাখতে চেষ্টা চালায় পুতু। জামাল তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে চলে আসে। এর জের ধরে ৭ জুলাই রাতে শওকত আলী পুতু, তার ভাই দেলোয়ার হোসেন, লিয়াকত, সাদ্দাম, ওসমান গণি ও দেলোয়ারের ছেলে মেহেদী মিলে জামালকে বাজার থেকে ধরে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই মিলে লোহার রড় ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেয়। এসময় তাকে কোপানোও হয়।
তারা আরও জানায়, একসময় জামাল অচেতন হয়ে গেলে তাকে মৃত ভেবে জনচলাচলের রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। এক টমটম চালক বাড়ি ফেরার পথে একজনকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে কাছে যান এবং জামালকে চিনতে পেরে ঘরে খবর দেয়া হয়। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে তাকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়। তাড়াতাড়ি সুস্থ হবার আশায় তাকে পাঁচলাইশস্থ পার্কভিউ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে খরচ বেশি পড়ায় আর্থিক অনটনের কারণে জামালকে আবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ১১ জুলাই। সেখানেই সোমবার বেলা ১২টার দিকে মারা যান জামাল।
কামাল জানায়, মাদক ব্যবসায়ী ইউছুপের পরিবার উল্টো আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। সোমবার সদর থানার এক এসআই তা তদন্তে এসে আমার ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ জেনে চলে গেছে।
ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বিষয়টি জেনেছেন উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় ইউছুফ আলী মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তার ছেলে দেলোয়ার, পুতু, লিয়াকত, সাদ্দাম ও ওসমানরা খুবই বেপরোয়া। তারা মাদকের কাঁচা টাকায় ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করেই চলে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ টুঁশব্দটিও করতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে মাদকসহ নানা অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বছর জুলাই মাসে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে হামলাকারিদের এক ভাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। জামাল উদ্দিন দূর্বৃত্তদের মাদক ব্যবসা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে বলেন, গত কিছুদিন আগে খরুলিয়া বাজার পাড়ায় কথিত টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় দূর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে এক যুবককে আহত করে বলে খবর পেয়েছিলাম। সেই আহত যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে বলে শুনেছি। তার মৃতদেহ স্বজনরা বাড়ী নিয়ে যায়।নিহতের বাড়ীতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয়।
পরিদর্শক (তদন্ত) জানান, জামালের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া ছিল থানায়। সেটার তদন্ত করতে গিয়ে মূল ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। এখন নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













