চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তিন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষা দিতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দক্ষিণ শিলক তৈয়বীয়া নুরিয়া ছত্তারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার রফিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী রেজাউল করিম ও শিক্ষিকা কামরুন্নাহার সুমির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া ক্লাস না করে, টেস্ট পরীক্ষা না দিয়েও কফিল ও দৌলত নামের দু’জন ছাত্র পরীক্ষা দেয়ারও অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর গত ২৬ জুন লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই তিন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। অভিযুক্তকারীরা হলেন— মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী মুন্নী আকতার, মনোয়ারা বেগম ও কুলছুমা আকতার।
এদিকে লিখিত অভিযোগের ১১দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ— এমনটা জানালেন ভুক্তভোগীরা। তবে এ বিষয়ে এখনও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তিনজনই উপজেলার দক্ষিণ শিলক তৈয়বীয়া নুরিয়া ছত্তারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০২৩ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন। তারা নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিতসহ টেস্ট পরীক্ষা ও বিশেষ কোচিং ক্লাশ করেও এবার দাখিল পরীক্ষা দিতে পারেনি। এতে ওই শিক্ষার্থীদের এক বছর নষ্ট হওয়ায় মাদ্রাসার অফিস সহকারী রেজাউল করিম, শিক্ষিকা কামরুন্নাহার সুমি ও ভারপ্রাপ্ত সুপার রফিকুল ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী আয়শা ছিদ্দিকা বলেন, ‘গত বছর অক্টোবরে টেস্ট পরীক্ষা শেষে ডিসেম্বর থেকে কোচিং করি। কিন্তু জানুয়ারিতে ফরম পূরণের টাকা দিতে গেলে জমা নেননি অফিস সহকারী রেজাউল করিম। নিয়মিত হয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে পারিনি কিন্তু ক্লাস না করে, টেস্ট পরীক্ষা না দিয়েও কফিল ও দৌলত নামের দু’জন ছাত্র পরীক্ষা দিয়েছে। আমি চাই এর সাথে জড়িতদের শাস্তি হোক।’
আয়শা ছিদ্দিকার মা মুন্নি আকতার বলেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনেক বলেছি তবুও হয়নি। আমার মেয়ের এক বছর নষ্ট করেছে তারা। তাই ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অফিস সহকারী রেজাউল করিম (অভিযুক্ত) বলেন, ‘সার্ভারের সমস্যার কারণে সেসময় ওই তিন শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। রেজিস্ট্রেশনের জন্য শ্রেণি শিক্ষক তালিকা দেয় আর কম্পিউটারের শিক্ষক আরাফাত কাজ করে, এসব তাদের দায়িত্ব। সেসময় শ্রেণি শিক্ষিকা ছিলেন কামরুন্নাহার সুমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার ওই তিন শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রে শন হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিবে, এক বছর পিছিয়ে গেছে আরকি। আর এটা আমার বিষয় নয়, মাদ্রাসার প্রধান (ভারপ্রাপ্ত সুপার) আছে, আমি তো অর্ডারের মালিক। আমাকে তো কর্তৃপক্ষ অর্ডার দিছে, যেখানে পাঠায় সেখানে চলে যাই।’
এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাউকেই না জানিয়ে ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষার জন্য ওই তিন শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে উপজেলার বেতাগী রহমানিয়া জামেউল উলুম দাখিল মাদ্রাসা নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। আর এটি করেছেন অভিযুক্ত অফিস সহকারী রেজাউল করিম।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বেতাগী রহমানিয়া জামেউল উলুম দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী মো. সাইফুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘গত বছর দক্ষিণ শিলক তৈয়বীয়া নুরিয়া ছত্তারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় যে তিন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হয়নি এবার তাদেরকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে ডিল করেছেন ওই মাদ্রাসার অফিস সহকারী রেজাউল করিম।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদ্রাসার শিক্ষিকা কামরুন্নাহার সুমি (অভিযুক্ত) বলেন, ‘এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়। রেজিস্ট্রেশন হয় নবম শ্রেণিতে। তখন শ্রেণি শিক্ষক ছিলেন ছাবের স্যার। রেজিস্ট্রেশনের কাজ করেন অফিস সহকারী রেজাউল করিম ও কম্পিউটার অপারেটর আরাফাত। আমার মাতৃকালীন ছুটি শেষে পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষার শেষের দিকে ছাবের স্যার বললেন— ওই তিনজনের রেজিস্ট্রেশনে সমস্যা হয়েছে পরীক্ষা দিতে পারবে না। পরে অফিস সহকারী রেজাউল করিম বলেন- সেটা অনলাইনের ভুল। তখন তাকে বললাম- এটা আপনারা বুঝবেন। গার্ডিয়ানকে আপনারা বুঝান, আমাদের বুঝিয়ে লাভ নাই।’
এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার রফিকুল ইসলামের (অভিযুক্ত) মুঠোফোনে গত এক সপ্তাহ ধরে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মাদ্রাসা সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তলব করলে এটা ধামাচাপা দিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে অফিস সহকারীসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিভাবকরা ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছেন শুনেছি। এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। আশা করছি, ইউএনও স্যার এর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে কেন অভিযোগ দিয়েছে, এতদিন কোথায় ছিল তারা। আর তারা আমাকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমাকে অভিযোগটি দিতে বলেন।’
গত ২৬ তারিখ ইউএনও’কে দেয়া অভিযোগের কপি প্রতিবেদকের কাছে আছে বললে- তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। ইউএনও সাহেব আজকে আমাকে ডেকেছেন। এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’













