৯ ডিসেম্বর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজশাহীর সামাদের মৃত্যুদণ্ড

বাংলাধারা ডেস্ক »

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মামলায় রাজশাহীর পুঠিয়ার মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৩৯তম রায় ঘোষিত হলো।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। সামাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর মধ্যে চারটি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম বলেন, ১৯৭১ সালে ১৫ জন নিরস্ত্র লোককে সে হত্যা করে। বহু মানুষকে সে এবং তার সহযোগীরা অত্যাচার করেছে। ৪০ থেকে ৫০টি বাড়িঘর লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এইসব অপরাধে তার বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রত্যেকটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, তার অপরাধের মাত্রা এতো বেশি যে, তার জন্য শুধু মৃত্যুদণ্ড যথেষ্ট না। এর থেকে বেশি সাজা থাকলে সেটি তার জন্য প্রযোজ্য ছিল।

আসমিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ বছরের এক বালক এতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে- তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মূল ঘটনা হলো- এ আসামির বাবার সঙ্গে সাঁওতালদের জমির বিরোধ থেকে তাকে আসামি করা হয়।’ ‘সাঁওতাল পল্লীর লোকদের সঙ্গে আসামির বাবার জমি-সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ১৯৬৪ সালে জমি বিনিময় করে সাঁওতালরা এসেছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের বছরে এসে সাঁওতালরা বিনিময়কৃত ৫০ একর জমি ফেরত চাইলে আসামি, আসামির বাবা এবং এলাকার লোকদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে আসামির বাবাও মারা যান। আমি মনে করি, মামলাটি জমি-সংক্রান্ত বিরোধের। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আসামি প্রতিকার পাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আদালতে ডকুমেন্ট দিয়ে প্রমাণ করেছি এটা একাত্তর সালের ঘটনা নয়। জমির বিরোধকে কেন্দ্র তাকে ফাঁসানো হয়েছে। জমি নিয়ে যে বিরোধ ছিল তা আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’উচ্চ আদালতে আপিল করলে সে খালাস পাবেন বলে জানান সামাদের আইনজীবী ।

এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ৮ জুলাই মামলাটি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।আর এ বছরের ১৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়। চার সাঁওতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন ছাড়াও অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ জানিুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর ওই বছরের ১২ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে পাচঁ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পত্র দাখিল করে প্রসিকিউশন।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহীর পুঠিয়ার বাঁশবাড়ী এলাকার মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মো.আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁ মুক্তিযুদ্ধের আগে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে শান্তি কমিটির স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। ওই সময় ফিরোজ খাঁর নেতৃত্বে চারজন সাঁতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন, ৮ থেকে ১০টি বাড়িঘর লুণ্ঠনসহ ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পুঠিয়া থানার ভালুকগাছী ইউনিয়নের সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে আসামি ফিরোজ খাঁ, পাকিস্তানী সেনাবহিনী ও তার সহযোগীরা স্বাধীনতার পক্ষের লাড়ে হেমব্রম, কানু হাসদা, জটু সরেন ও এবং টুনু মাড্ডিকে তরবারি দিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর মালাটির তদন্ত শুরু হয়। তখন এ মামলায় আসামি করা হয়েছিল ছয়জনকে। কিন্তু তদন্ত চলার সময়ই বাকি পাঁচ আসামির মৃত্যু হলে একমাত্র আসমি হিসেবে মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ থাকেন। তদন্ত চলার সময় নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হন এই আসামি। পরে ২০১৭ সালে ২৪ জানুয়ারি তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এসবি

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ