২৫ অক্টোবর ২০২৫

মানবতার জন্য সবিনয় নিবেদন 

হাসান আকবর » 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অকুল পাথারে পড়া চট্টগ্রামের মানুষগুলোর চেয়ে আইন কী বড় হয়ে  গেল !!!

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। কেউ কেউ শখ করে বাণিজ্যিক রাজধানীও বলেন। আর এর সবকিছুই মুলতঃ বন্দরেরই অবদান। চট্টগ্রাম বন্দরই এই শহরকে বর্তমান অবস্থানে এনেছে। আলাদা একটি মর্যাদা দিয়েছে। দিয়েছে গুরুত্ব। বন্দর না থাকলে চট্টগ্রামের সাথে রাজশাহী কিংবা রংপুরের খুব বেশী পার্থক্য থাকতো না। বন্দরই চট্টগ্রামের শান, মান। চট্টগ্রামকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কিংবা উন্নতমানের শহরের যে তকমা দেয়া হয়েছে, অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে- তা এই বন্দরেরই দান। 

চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে উঠেছে একশ’ বছরেরও বেশী আগে। লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ কর্ণফুলী নদীর ৪৩ কিলোমিটার এলাকায়  পরিচালিত হয় বন্দরের কার্যক্রম। কর্ণফুলী নদী ছাড়াও নদী পাড়সহ সন্নিহিতএলাকা জুড়ে বন্দরের ১৬শ’ একর ভূমি রয়েছে। যা চট্টগ্রামের মানুষেরই বাপ দাদার ভিটে মাটি ছিল। ছিল অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন মোড়ানো জমি-জিরাত। কারো ছিল ধানী জমি। কারো বা মাছ ভরা পুকুর, দীঘি। গোয়াল ভরা ছিল দুধেল গাভী কিংবা হালের বলদ। সবই উজাড় করে দিয়েছে মানুষ। এই বন্দরের জন্য, দেশের জন্য। অর্থনৈতিক মুক্তি কিংবা সমৃদ্ধির জন্য। চট্টগ্রামের মানুষের দেয়া কিংবা এই অঞ্চলের মানুষের কাজে লাগতো এমন ভূমিতে দিনে দিনে ফুলে ফলে সুশোভিত হয়েছে বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। 

দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে বছরে ৩০ লাখ টিইইউএস-এর চেয়ে বেশী কন্টেনার এবং দশ কোটি টনের মতো খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার দেশী বিদেশী মাদার ভ্যাসেল এবং ফিডার ভ্যাসেল বন্দরে আসা যাওয়া করে। বছর জুড়ে চলা বিশাল এই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে গড়ে আড়াই হাজার কোটিরও বেশী টাকা আয় করে। বেতন বোনাসসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়েও বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে বারো তেরোশ’ কোটি টাকা থাকে। বছরে প্রায় চারশ’ কোটি টাকা বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স হিসেবে সরকারকে প্রদান করা হয়। এরপরও বন্দরের তহবিলে ৭/৮শ কোটি টাকা জমা হয়। বন্দরের তহবিলে প্রায় চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে শুধু চট্টগ্রামের মানুষ নন, দেশের নানা অঞ্চলের মানুষ কাজ করেন, ব্যবসা করেন। বন্দরের চাকরি কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য কখনো চট্টগ্রামের জন্য কুক্ষিগত করা হয়নি। এই বন্দর সবার, সব মানুষের। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যে ছয় হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তাদেরকে কখনো কোনদিন কার বাড়ি কোথায় এই বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর বছরে যে এক হাজার কোটি টাকা আয় করে তা কখনো শুধু চট্টগ্রামের জন্য খরচ করা হয়নি। এই টাকা থেকে পানগাঁও টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে। পায়রা বন্দর হচ্ছে। মাতারবাড়ি পোর্ট হচ্ছে। সরকারি কোষাগারেও জমা দেয়া হয়েছে। দেশের নানা স্থানে দান অনুদান হয়েছে। এসব নিয়ে কেউ কোনদিন কোন কথা বলেন নি। বলতে চান নি। 

এই অঞ্চলের মানুষ বরাবরই চট্টগ্রাম বন্দরের কল্যান, সমৃদ্ধি এবং সাফল্য চেয়েছেন। নানাভাবে সহায়তা করেছেন। করছেন। কষ্ট পেলেও বন্দরের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কোনদিন কেউ কিছু বলেন নি। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট সহ্য করেছেন, ফ্লাইট মিস করার দুর্ভোগ সয়েছেন, স্কুল কলেজ মিস করেছেন তবুও মানুষ চেয়েছেন বন্দর সচল থাক। ঠিক যেমনটি নানা যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠা বাপ মাও যেমন চান যে, সন্তান থাকুক দুধে ভাতে।

দেশের প্রধান এই বন্দরকে বুকের সব ভালোবাসা উজাড় করে দেয়া চট্টগ্রামের সেই মানুষগুলোর আজ বড় দুর্দিন। ভয়াবহ রকমের কষ্টে আছেন তারা। কষ্টে আছেন এখানকার ধনী গরীব সব মানুষই। উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর অনিশ্চয়তায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন এখানকার হাজারো মানুষ। অগাধ সম্পদের মালিক হয়েও জীবন বাঁচানো যাচ্ছে না। প্রভাবশালী বহু মানুষও চরম অসহায় হয়ে উঠেছেন। মানুষের কষ্টে বিবর্ণ হচ্ছে সময়। করোনা মহামারীতে তছনছ হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের বহু মানুষের জীবন। হাসপাতাল খুঁজতে খুঁজতে পথে ঘাটে মরছেন মানুষ। এম্বুলেন্সে ছটফট করতে করতে, গাড়িতে আকুলি বিকুলি করতে করতে মারা যাচ্ছেন এক একজন। এরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এক লিটার গ্যাস পাচ্ছেন না। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো ছটফট করতে করতে কিংবা পুকুরে ডুবিয়ে ধরা অভাগার মতো আকুলি বিকুলি করতে করতে জীবন যাচ্ছে অনেকের। করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া হতভাগাদের মধ্যে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের হিসেব থাকলেও ‘করোনা উপসর্গ’ নিয়ে ছটফট করতে করতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের কোন হিসেবই কোথাও নেই। এরা পথে ঘাটে গাড়িতে, এম্বুলেন্সে, ঘরে কিংবা বাড়িতে হারাচ্ছেন মূল্যবান জীবন। 

শুধু চট্টগ্রামই নয়, তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজারসহ পাঁচটি জেলার দুই কোটিরও বেশী মানুষ আজ মাত্র ২০টি আইসিইউ এবং শ’চারেক সাধারণ বেডের দিকে তাকিয়ে আছেন। বাঁচা তো দূরের কথা, শান্তিতে মরার জন্যও একটি আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেশন কিংবা হাইফ্লো অক্সিজেন জুটছে না। হাসপাতালে বেড জুটছে না চট্টগ্রামের হাজারো মানুষের। ফ্লোরে গড়াগড়ি করছেন মানুষ। কয়েক জন শীর্ষ ধনী করোনায় অনেকটা বিনে চিকিৎসায় মারা যাওয়ার পর অবস্থাপন্নদের অনেকেই ঢাকা পাড়ি দিয়েছেন। কেউ কেউ চাটার্ড বিমানে বিদেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ ? যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, যাদের কোথাও পালানোর পথ নেই তারা চরম অনিশ্চয়তায় দিন এবং রাত কাটাচ্ছেন। 

অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখা চট্টগ্রামের লাখো মানুষের মুখে মুখে একটি প্রশ্ন ঘুরছে কয়েক দিন ধরে। চট্টগ্রাম বন্দর কেন এগিয়ে আসছে না ? করোনা আতংকে এবং আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে ছটফট করতে থাকা দিশেহারা মানুষগুলোর সামনে তো চট্টগ্রাম বন্দর অবলম্বন হয়ে উঠতে পারে। প্রায় চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে পড়ে আছে। এই টাকার এক বছরের শুধু সুদের কিয়দাংশ খরচ করলেই তো মানুষ স্বস্তিতে নি:শ্বাস নিতে পারেন। বুক ভরে শ্বাসটা অন্তত নিতে পারেন।  

কিন্তু কি করছে বন্দর! মানুষ থাকলেই তো বন্দর। মানুষই যদি না থাকে তাহলে কি হবে বন্দর দিয়ে!! এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম, এছাক ব্রাদার্সের মালিক মোহাম্মদ ইউনূস কিংবা আরো অনেকেই চাইলে হাসপাতালের মালিক হতে পারতেন। শত শত আইসিইউ কিংবা ভেন্টিলেশন কেনা যাদের জন্য কোন ব্যাপারই ছিল না। আস্ত অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসিয়ে কোটি কোটি লিটার অক্সিজেন উৎপাদন যাদের জন্য ছিল একেবারে চাট্টিখানি ব্যাপার, তারাই হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিয়েও মিনিটে দশ-পনের লিটার অক্সিজেনের ওভার ফ্লো সিস্টেমের নাগাল পেলেন না। কি কাজে লাগলো এদের শত কোটি টাকার সম্পদ, সম্পত্তি! অবর্ণনীয় এবং অমানবিক কষ্ট সয়ে চট্টগ্রামের মানুষগুলো মারা যাচ্ছেন। মানুষই যদি না বাঁচে তাহলে কি কাজে লাগবে হাজার কোটি টাকার বন্দর! এই ধরনের আরো বহু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মুখে, মনে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের নিজেদের একটি দেড়শ’ বেডের হাসপাতাল আছে। জেনারেল হাসপাতাল। একুশ জন ডাক্তার রয়েছেন হাসপাতালটিতে। সাধারণ মানের চিকিৎসা দেয়া হয় এই হাসপাতাল। পরিস্থিতি জটিল হলে এখান থেকে রোগী পাঠিয়ে দেয়া হয় চমেক হাসপাতালে। সন্তান জন্মানোর মতো চিকিৎসাও নাকি এখানে হয় না। দেড়শ বেডের হাসপাতালটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চমৎকার একটি বহুতল ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। পুরানো ভবনটির পাশাপাশি নতুন ভবনটি মিলে এখানে পাঁচশ’ বেডের একটি হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন নয়। এই হাসপাতালে অনায়াসে আইসিইউ, এইচডিইউ বেড বসানো কিংবা সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করার সুযোগ রয়েছে। 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বন্দর করছে না কেন? মানুষকে বাঁচাতে কেন হাত বাড়াচ্ছে না বন্দর?? বন্দরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়ে ছটফট করছেন অনেকেই। তবুও মানুষের আকুতি কেন কানে যাচ্ছে না বন্দরের! সাধারণ মানুষ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের বহু মানুষ প্রশ্নগুলো প্রতিনিয়ত ছুঁড়ছেন ইথারে। 

হ্যাঁ, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের জন্য ৫০ বেডের একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড করছে। যেখানে ওভার-ফ্লো অক্সিজেন সুবিধা থাকবে। ক্রমে ৫টি আইসিইউ বেড যুক্ত করা হবে। এই হাসপাতালে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তা কর্মচারী এবং তাদের পরিবার পরিজন মিলে চল্লিশ হাজারের মতো মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। তাহলে চট্টগ্রাম এবং আশপাশের দুই কোটি মানুষের জন্য কী বন্দর কতৃপক্ষের কোন দায়দায়িত্ব নেই? সামাজিক দায়িত্ব বা সিএসআর? 

বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বললেন, আইন নেই। বন্দরের কাজ কি সেটি আইনে বলা আছে। নদী সংরক্ষন, নাব্যতা রক্ষা, জাহাজ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং। এর বাইরে আর কিছু করার সুযোগ বন্দরের আইনে নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ ভারতের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবী শেঠীর সাথে একটি হাসপাতাল করতে চেয়েছিল। নানা প্রক্রিয়া এবং ধাপ পেরোনোর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়া হয়। আইনের গ্যাড়াকলে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল বন্দর। তাই আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

অবশ্য কেউ যদি উদ্যোগ নেন তাহলে বন্দর সেখানে সহায়তা করতে পারে, অনুদান দিতে পারবে। এটির আইন আছে। এই আইনে বন্দর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। সম্প্রতি করোনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২৫ কোটি টাকা দিয়েছিল বন্দর। 

মাননীয় মেয়র, আপনি কি উদ্যোগ নিতে পারেন না? বড় একটি হাসপাতাল বা ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। যাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ অংকের অনুদান দেবে। আইনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল করতে পারছে না। কিন্তু অনুদানের ব্যাপারটি আইনে আটকাবে না। আপনি কিংবা আপনারা সবাই মিলে বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুদান নিশ্চিত করতে পারেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্দরেরই ২৩৫ একর ভূমি ইজারা দিয়ে প্রতি বছর ৪২ কোটি টাকা আয় করে। শুধুমাত্র চট্টগ্রামের এই ভূমি ইজারার এক বছরের টাকা খরচ করলেই লাখো মানুষের ছটফট করে মারা যাওয়ার অবর্ণনীয় কষ্টের অবসান ঘটে। আইনের জন্য বন্দর পারছে না, মাননীয় মেয়র এক্ষেত্রে আইন তো আপনার জন্য কোন বাঁধা নয়। নগরবাসীর জীবন রক্ষার দায়িত্বতো আইনই আপনাকে দিয়েছে। মাননীয় মেয়র, বড় পরিসরে কিছু একটি করুন। বন্দর থেকে অনুদান নিয়ে মানুষ বাঁচানোর উদ্যোগ নিন। 

মাননীয় বন্দর চেয়ারম্যান, আপনি আইনের জন্য নতুন করে হাসপাতাল করতে পারছেন না। ফিল্ড হাসপাতাল জাতীয় কিছু করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার সুযোগ আপনার নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আইন মানুষের জন্য, নাকি মানুষ আইনের জন্য? নতুন হাসপাতাল না করে বন্দরের বিদ্যমান হাসপাতালটিতে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা শুরু করলে কি আইন খুব বেশী লংঘিত হবে? অন্তত ৫শ’ বেডের একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংকে অলস পড়ে থাকা বন্দরের হাজার হাজার কোটি টাকা থেকে দশ বিশ বা পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ করে কি আইসিইউ- ভেন্টিলেশন কিংবা এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় ওভার-ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার সুযোগ  গড়ে তোলা যায় না? এতে আইনের কতটুকু ব্যতয় ঘটবে!! বলা হয়েছে, বন্দর হাসপাতাল শুধু বেড বা আইসিইউ করলে কি হবে? ডাক্তার কই?? মাত্র ২১ জন ডাক্তার দিয়ে কি করে কি হবে? আত্মরক্ষার্থে দারুণ প্রশ্ন। কিন্তু চট্টগ্রামে কি ডাক্তারের আকাল পড়েছে। বিএমএ’র হিসেবে পাঁচ হাজারেরও বেশী ডাক্তার রয়েছেন চট্টগ্রামে। এদের মধ্যে এক হাজারের মতো সরকারি ডাক্তার। বেসরকারি ডাক্তারদের অনেকেই চেম্বার বন্ধ করে ঘরে চলে গেছেন। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে ঘরে ঘরে অলস বসে থাকা ডাক্তারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং প্রনোদনা নিশ্চিত করলে এদের অনেকেই হাত বাড়াবেন। লকডাউনে কাজ করা বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুই মাসের বেসিক প্রনোদনা হিসেবে প্রদানের সুপারিশ করা হচ্ছে। একই ধরনের প্রনোদনা দিয়ে অনায়াসে বেসরকারি ডাক্তার নিয়োগ করা যায়। আইসিইউ পরিচালনার ব্যাপারটি রপ্ত করতে আমাদের মেধাবী সন্তানদের খুব বেশী বেগ পেতে হবে না। এছাড়া মানুষ বাঁচানোর প্রয়োজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি বিদেশ থেকে ডাক্তার নিয়ে আসে তাতেও কী বন্দরের টাকার অভাব পড়বে! শুধুমাত্র সদিচ্ছা, একমাত্র কিছু মানুষের  সদিচ্ছাই চট্টগ্রামের লাখো মানুষকে এই অথৈ সাগরে দিশা দিতে পারে। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভয়াল এই মহামারীতে অকুল পাথারে পড়া চট্টগ্রামের মানুষগুলোর চেয়ে আইন কী বড় হয়ে গেল?? চট্টগ্রামের লাখো মানুষ আজ আপনার সদয় দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। 

লেখক : প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক আজাদী।

আরও পড়ুন