বাংলাধারায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের ঢাকাইয়া শিবিরে জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত মো. আবদুল খালেকের নামীয় ওয়ারিশান সনদটি বাতিল করেছেন জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
ওয়ারিশান সনদ বাতিলের বিষয়টি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব মুন্সিখানা শাখার সহকারী কমিশনার (ম্যাজিস্ট্রেট) তাজমীন আক্তার নিশ্চিত করে জানান, জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা রেকর্ড রুম, রেজিষ্ট্রেশন শাখা, রাজস্ব মুন্সিখানা শাখা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মো. আবদুল খালেকের নামীয় ওয়ারিশান সনদ বাতিল সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের আদেশ পাঠানো হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাঠানো মো. আবদুল খালেকের নামীয় ওয়ারিশান সনদ মামলা নং- ৩১৭ (মানিকছড়ি) এর সনদ বাতিলের আদেশ পেয়েছেন মর্মে নিশ্চিত করেছেন মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভুইয়া।
মানিকছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস সূত্রে জানা যায়, মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ওই ওয়ারিশান সনদটি দ্বারা ৪ একর ভূমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের নামে। সূত্র: রেজিষ্ট্রেশন দলিল নং- ০৬/২০২৩ (মানিকছড়ি)
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. শাহজাহান সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের নামে ওই ৪ একর ভূমি রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। ইতোমধ্যে তার নামে ২৩৪নং সেম্প্রুপাড়া মৌজায় ৮৬নং নতুন খতিয়ানও সৃজন করা হয়েছে বলে জানান মৌজার হেডম্যান থোয়াইচিং চৌধুরী।
এদিকে জালিয়াতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত ১০ জনের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা বিচারধীন রয়েছে। ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের সেম্প্রুপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাদ্রাসা শিক্ষক ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন এ মামলার বাদী। (সূত্র : সি.আর মামলা নং- ৪৫৫/২০২৩)
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বাংলাধারাকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত মো. আবদুল খালেকের নামীয় ওয়ারিশান সনদটি বাতিল করা হয়েছে।
বিধি মোতাবেক মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের নামীয় ভূমির রেজিষ্ট্রেশন দলিল ও সৃজিত খতিয়ানও বাতিল করা হবে।
ভুক্তভোগী ফারুক হোসেনের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ১২.১০.২০২১ খ্রি. তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলিনগর নাদেরাবাদ গ্রামে ভূমির রেকর্ডীয় মালিক মো. আবদুল খালেক বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে, সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা সাব্যস্ত করে, মৃত্যুস্থান বাড়ির হোল্ডিং নম্বর- ২৭১, গ্রাম- ঢাকাইয়া শিবির, উপজেলা- মানিকছড়ি, জেলা- খাগড়াছড়ির ঠিকানা দেখিয়ে রেকর্ডীয় মালিক মো. আবদুল খালেকের মৃত্যু নিবন্ধন ইউপি. রেজিস্টারভুক্ত করেন। মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্বের স্থায়ী ঠিকানা ও মৃত্যুর সময় বর্তমান ঠিকানা: ২৭১, ঢাকাইয়া শিবির- ৪৪৬০, বাটনাতলী, মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি উল্লেখ করলেও বাংলাধারার প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উক্ত ঠিকানায় মো. আবদুল খালেক কিংবা তার পরিবারের কোনো সদস্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। সূত্র: ২নং বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু নিবন্ধন সনদ নম্বর: ১৯৬২৪৬১৬৭১৯১০৫৬৬২, নিবন্ধন বহি নম্বর: ১, সনদ প্রদানের তারিখ: ২৪.০২.২০২২ খ্রি.।
সরেজমিনে জানা যায়, ৩নং আসামি মো. মুনিরুল ইসলাম ১নং, ২নং, ৪নং, ৫নং, ৬নং, ৭নং, ৮নং আসামিগণের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ২নং বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. মহরম আলী, ইউপি. চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম, ২৩০নং বাটনাতলী মৌজা প্রধান গংব্রা চৌধুরীর নিকট প্রকৃত তথ্য গোপনের মাধ্যমে ২ জন কন্যা ওয়ারিশকে বঞ্চিত করে তাদের পিতা- মো. আব্দুল খালেকের নামীয় ওয়ারিশান সনদ সংক্রান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। সূত্র: ২নং বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকার সনদ সংক্রান্ত বিবিধ মামলা নং- ৩১৭/২০২২ (মানিকছড়ি), স্মারক নম্বর- ৩১৭, তারিখ- ২৫.০৭.২০২২ খ্রি.।
মো. আবদুল খালেকের মৃত্যুর পর তার দুই কন্যা- রোকসানা বেগম ও শিউলী বেগমের নাম পরিচয় গোপন রেখে স্ত্রী মোসা: লাইলি বেগম ও পুত্র মো. মুনিরুল ইসলাম তাদের দুইজনের নামে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ওয়ারিশান সনদ গ্রহণ করেন। সূত্র: খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের উত্তরাধিকারী সনদ স্মারক নম্বর: ৩১৭/২০২২-২৭৮
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের নামীয় নামজারী মামলা নং- ১৮৩ (মানিক) ২০২২ এর মূল নথিতে যে কবুলিয়তের ফটোকপি সংযুক্ত করা হয়েছে, তাও সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত। যার প্রমাণ রয়েছে বাংলাধারার এ প্রতিবেদকের হাতে।ওয়ারিশান সনদ ও সরকারি কবুলিয়ত ফরম জালিয়াতি করে
মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন সহ অন্যান্য আসামিগণ শাস্তিযোগ্য ফৌজদারী অপরাধ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে আরও একটি জালিয়াতির মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন বলে জানান মামলার বাদী ফারুক হোসেনের আইনজীবী মো. শাহিন হোসেন।