খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ২৩০ নং বাটনাতলী মৌজার ঢাকাইয়া শিবির গ্রামে সম্পূর্ণ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি ভাবে দুই ব্যক্তির নামে ৫ একর করে ১০ একর তৃতীয় শ্রেণির ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত নতুন জোত/ হোল্ডিং নং- ১৩৯ এর মালিক মো. জসিম উদ্দিন এবং ১৪০ নং হোল্ডিং এর মালিক মো. আলী আজম। তাদের উভয়ের পিতার নাম লিখা রয়েছে- মৃত মো. হোসেন।
২নং বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মো. মহরম আলী ও মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মো. জসিম উদ্দিন, মো. আলী আজম, পিতার নাম- মৃত মো. হোসেন নামে মানিকছড়ি উপজেলার কোথাও কোনও ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। এ নাম-ঠিকানা সম্পূর্ণরুপে ভূয়া।
স্থানীয় ঢাকাইয়া শিবির গ্রামের বাসিন্দা মো. মারুফ গাজী, মো. কবির হোসেন, আবদুল মোতালেব, ইমাম হোসেন ও শুক্কর আলী সরদার জানান, এখানে বিগত ৪০ বছর ধরে বসবাস করি। এই নামে বাটনাতলী ইউনিয়নে কোনও লোক নাই, তারা বহিরাগত হতে পারে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মো. জসিম উদ্দিন ও মো. আলী আজমের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার ধুরং (বাবুনগর) গ্রামে। তারা দুইজন আপন ভাই, তারা দুবাই প্রবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন ভূমিদস্যুর মাধ্যমে তারা মানিকছড়িতে তথ্য গোপন ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমিহীন সেজে সরকারি ভাবে ৫ একর করে ভূমি বন্দোবস্তী নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ঢাকাইয়া শিবির গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী আশ্রাফ ২৩০ নং বাটনাতলী মৌজার মো. জসিম উদ্দিন ও মো. আলী আজমের নামীয় জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত নতুন জোত/হোল্ডিং নং- ১৩৯ ও ১৪০ এর যাবতীয় কার্যক্রম বাতিলের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন।
মো. আলী আশ্রাফ বলেন, ওই জালিয়াত চক্রের সদস্য জসিম উদ্দিন ও আলী আজমন গং ১৯৮১-৮২ সালের সরকারি ভাবে বন্দোবস্তী দেওয়া আসল হোল্ডিং এর চৌহদ্দি, তাদের নামীয় নতুন হোল্ডিং এ ব্যবহার করে আমার অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছে। তাদের দ্বারা আমি সর্বস্বান্ত। আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
মানিকছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী ওই অভিযোগ খানা তদন্ত করছেন। সরেজমিনে অভিযোগ খানা তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মনজুর আহাম্মদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০-১১ সালে তৎকালীন মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম এম মহিউদ্দিন কবীর মাহিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালীন ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. সাজ্জাদ হোসেন’কে মোটা অংকের অর্থ ঘুষ দিয়ে চিহ্নিত ভূমির দালালরা এসব ভূয়া হোল্ডিং নতুন জমাবন্দি ভলিউম ভূক্ত করেছেন। জমাবন্দি নকলে ১৩৯ নং হোল্ডিং এর বন্দোবস্তী মামলা নং- ১৩২৩/৮৩-৮৪ এবং ১৪০ নং হোল্ডিং এর বন্দোবস্তী মামলা নং- ১৪৪৪/৮৩-৮৪ লিপিবদ্ধ থাকলেও, এসবের কোনটিরই নথি নেই ভূমি অফিসে। আর ভূমি অফিস থেকে প্রজাকে দেওয়া হয়নি কবুলিয়ত ফরমও।
সূত্রটি আরও জানায়, মানিকছড়ির চারটি ইউনিয়নের সবকটি মৌজায় তাদের দ্বারা কয়েকশত নতুন জোত/হোল্ডিং সৃজন করা হয়েছে। এসি (ল্যান্ড), সার্ভেয়ার, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও চিহ্নিত দালালচক্র মিলে এ অবৈধ কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে।
তবে মানিকছড়ি ভূমি অফিস, রামগড় মহাকুমা ভূমি অফিস ও খাগড়াছড়ি জেলা মহাফেজ খানায় বার বার তল্লাশি চালিয়েও এ সমস্ত নতুন জোত/ হোল্ডিং এর বন্দোবস্তী নথির কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে সৃজিত ১৯৮০-৮১, ১৯৮১-৮২ ও ১৯৮৩-৮৪ সালের তৎকালীন ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ও সীলমোহর সম্বলিত কয়েকটি কবুলিয়ত ফরমের সন্ধান পান এ প্রতিবেদক। এ কাজের সাথে মানিকছড়ির কয়েকজন দলিল লেখক ও পেশাদার ভূমির দালাল সরাসরি জড়িত থাকারও প্রমাণ রয়েছে এ প্রতিবেদকের হাতে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, নতুন জোত/হোল্ডিং এর জমাবন্দি নকল প্রদান ও ভূমির রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম সহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
নতুন হোল্ডিং এর কোনও ভূমির নামজারী মামলা রুজু না করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূমি দখলে নাই অথবা জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত নতুন জোত/হোল্ডিং বাতিল করা হবে। সরকারি কবুলিয়ত ফরম জালিয়াতির সাথে জড়িতরা কোনও ভাবেই ছাড় পাবে না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।