৯ ডিসেম্বর ২০২৫

মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ৫৮ রোহিঙ্গা উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার»

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে গভীর সাগর থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ৫৮ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার এবং দুই পাচারকারিকে আটক করেছে র‍্যাব-১৫।

এসময় পাচারকাজে ব্যবহৃত একটি ট্রলারও জব্দ করা হয়েছে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪ টায় টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর উপকূলের গভীর সাগরে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম সরকার।

আটক পাচারকারিরা হল, কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার বাগমারা এলাকার মো. আবুল কাশেমের ছেলে মোহাম্মদ সোহেল (৩২) এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশিখালী ইউনিয়নের ছামিরা পাড়ার বাসিন্দা মৃত সিরাজুল হকের ছেলে মুছা কলিমুল্লাহ (৪২)।

মুছা কলিমুল্লাহ বর্তমানে কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ জানারঘোনা এলাকায় বাস করে। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ৫৭ জন রোহিঙ্গা এবং একজন স্থানীয় নাগরিক। এদের মধ্যে ১১ জন শিশু, ২৪ জন নারী ও ২৩ জন পুরুষ।

উদ্ধার হওয়ারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা। বাংলাদেশি স্থানীয় বাসিন্দার বাড়ী টেকনাফ উপজেলায়।

খাইরুল ইসলাম সরকার বলেন, টেকনাফের শামলাপুর উপকূল দিয়ে ট্রলার করে সাগরপথে কিছু লোকজনকে মালয়েশিয়া পাচারের খবরে র‍্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে গভীর সাগরে সন্দেহজনক একটি ট্রলার দেখতে পেয়ে জব্দ করা হয়। এসময় ট্রলারটির ডেকের নিচে বিশেষ কায়দায় জিন্মি করে রাখা অবস্থায় ৫৭ জন রোহিঙ্গা এবং একজন স্থানীয় নাগরিককে উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় দুই পাচারকারিকে।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় উচ্চ বেতনে বিভিন্ন পেশায় চাকুরি দেয়ার প্রলোভনে উদ্ধার হওয়াদের জনপ্রতি ৫০-৫৫ হাজার টাকার চুক্তি হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে আদায় করে দালালরা। অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থানকারি পাচারকারি চক্রের জাহাজে উঠার পর মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আদায় করার কথা ছিল।

খাইরুল বলেন, মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে গত ৩ দিন আগে মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশে রওনা দেন তারা। পাচারকারি চক্রের সদস্যরা মালয়েশিয়াগামীদের ৪-৫ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ করে টেকনাফের হাফিজাপাড়ার পাহাড়ী এলাকার গোপন আস্তানায় জড়ো করে। এক পর্যায়ে এ রকম কয়েকটি দল একসাথে জড়ো হওয়ার পর ছোট ছোট ট্রলারে করে গভীর সাগরে অবস্থানরত বড় জাহাজে তোলার ব্যবস্থা করে পাচারকারি চক্র।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো জানান, আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, দীর্ঘদিন ধরে তারা শরণার্থী ক্যাম্প কেন্দ্রিক মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সাথে জড়িত। এসব পাচারকারিরা গভীর সাগরে অবস্থানরত জাহাজে তুলে দেওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে আসছিল। সাগরের বড় জাহাজের দালালদের হাতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে তারা মোটা অংকের টাকা আদায় করে।

উদ্ধার হওয়া লোকজনকে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর এবং আটক পাচারকারিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান লে. কর্ণেল খাইরুল।

উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ দুপুরে মহেশখালীর সোনাদিয়া এলাকা হতে ১৪৮ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে মহেশখালী থানার পুলিশ। একইদিন ভোররাতে মালয়েশিয়া বলে তাদের সোনাদিয়া চরে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দালালরা। পরে তাদের ভাসানচর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ