২৩ অক্টোবর ২০২৫

মাস্ক পরাতে কঠোর আইন এখন সময়ের দাবি

রাইসুল উদ্দিন সৈকত  »

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এমন পরিস্থিতিতে আরও বেশি করে প্রয়োজন সতর্কতার। মাস্ক কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধে সহায়তা করে। জীবাণুর সংক্রমণ কমাতে মাস্কের ব্যবহার অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সংক্রমণের ঢেউ সামলাতে মাস্ক পরা খুবই জরুরি বলেই সচেতন করছেন গবেষকরা। তাই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে আমাদের দেশে একটা কঠোর আইন দরকার।স্বাস্থ্যবিধি মানা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বিকল্প নাই। এটা আমাদের বুঝতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ঢিলেমি করলে চলবে না। মাস্ক পরার একটি অভ্যাস প্রতিটি মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।

আমি মনে করছি, প্রত্যেককে সঠিকভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে দেশে একটা কঠোর আইন এখন সময়ের দাবি। কিন্তু এই মাস্ক পরা নিয়ে আমাদের সমাজের অনেকেই হাসি–ঠাট্টা করছেন। অনেকে সচেতনতা থেকেই মাস্ক পরছেন। যারা মাস্ক পরছেন না তাঁরা নিজে তো বিপদে পড়ছেনই, অন্যকেও বিপদে ফেলছেন।

আমরা সকলেই জানি যে, এর আগে করোনা লকডাউনের সময় করোনা ভাইরাসের উর্ধ্বমুখী ঠেকাতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘যারা মাস্ক পরছে তারা সেভ থাকছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না যে করোনা সহজে চলে যাবে। আমরা মাস্ক পরা শতভাগ নিশ্চিত করতে চাই। এজন্য আইন সংশোধন করে জরিমানাসহ আইনে আরও কঠোরতা রাখা যায় কিনা সেটা ভাবছি।’কোভিড-১৯ মহামারিটি বিশ্বজুড়ে পারিবারিক জীবনকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে, যা মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং দুঃখবোধ তৈরি করেছে।

আমরা সবাই জানি, বিশ্বের অন্য অনেক দেশের দেখানো পথ অনুসরণ করে, বাংলাদেশেও সম্প্রতি ১১ ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে কিংবা যেকোনো জনসমাগমে তো বটেই, এমনকি বাড়িতে কারো করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে পরিবারের সুস্থ সবার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলায় মাস্ক পরার নীতি আরও কঠোর করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এর আগে মাস্ক পরা নিয়ে বিদ্রুপ করা ট্রাম্পও এবার উল্টো পথে হাঁটছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে সম্প্রতি জনসম্মুখে মাস্ক পরতে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল সম্প্রতি সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। মাস্ক পরা নিয়ে কঠোর অবস্থানে যুক্তরাজ্যও। জুনে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়। বর্তমানে শপিংমলেও মাস্ক বাধ্যতামূলক, না হলে গুণতে হবে জরিমানা।

শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ(হু) অনেকেই বলেছিলো মাস্ক করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম না, এখন তারাও তাদের বক্তব্য পাল্টাচ্ছে। কেউ কেউ তো ঘরেও মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছে। অনেক সরকার তা পালনও করছে।

মানুষ হাঁচি, কাশি, গান গাওয়া, চিৎকার করা ও কথা বলার সময় মূলত ড্রপলেট আসে। আর করোনাভাইরাস মূলত ড্রপলেটের মাধ্যমেই বেশি ছড়ায়। করোনায় সংক্রমিত প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ জানেন না, তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন। এ কারণে তাঁরা চিন্তাহীনভাবে ঘুরে বেড়ান। এতে করোনার সংক্রমণ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। এ কারণেই সবাইকে মাস্ক পরিধান করা উচিত। মাস্ক এখন আর লজ্জার বিষয় না। নিরাপত্তা সতর্কতা না মানলে দেশে আবারও করোনা মহামারীর প্রকোপ বাড়তে পারে। এই মহামারীর ঠেকাতে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরার বিকল্প নেই। এই সাবধানতা অবলম্বন করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। করোনা টিকা গ্রহণ করলেও মাস্ক পরার কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সচেতনামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাছাড়াও সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং মাঠ পর্যায়ে সকল দপ্তরে ‘মাস্ক ব্যবহার ব্যতীত প্রবেশ নিষেধ’ ‘মাস্ক পরিধান করুন, সেবা নিন’ ইত্যাদি বার্তা ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

আমাদের স্পষ্ট মনে আছে, করোনাভাইরাসে যখন বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনা সংক্রমণ থামাতে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে বাড়ি থেকে বের হলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো দেশে নির্দেশ না মানলে জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়াও জাপানসহ পৃথিবীর বেশ কটি দেশ মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে করোনা-সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশে মাস্ক পরার ওপর এত দিন তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বাসা থেকে বের হলে দেখা যায় রাস্তাঘাট, বাজার, বিপণিকেন্দ্র, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, যানবাহন, অফিস-আদালতে অসংখ্য মানুষ মাস্ক ছাড়া তাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্কের যে একটি বড় ভূমিকা আছে, দেশে যে মহামারি চলছে, প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বহু মানুষ, তা বাংলাদেশের অসচেতন মানুষের চালচলনে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা প্রতিরোধে এখন বিজ্ঞানসম্মত সবচেয়ে ভালো উপায়ই হলো মাস্ক পরা। তবে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যবহারবিধি মেনে চললে কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব। সংক্রমণ প্রতিরোধে শুধু নিজে মাস্ক ব্যবহারবিধি মানলেই চলবে না। ব্যবহারের পরে মাস্ক কোথায় বা কীভাবে ফেলে রাখা হয়েছে, সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। 

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্তদের অর্ধেক মানুষই উপসর্গহীন ব্যক্তিদের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। তাই করোনায় আক্রান্ত হয়েও লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়া ব্যক্তিদের বলা হচ্ছে অ্যাসিমটোম্যাটিক পিপল।

গবেষকরা বলছেন, এমন মানুষ আমাদের আশপাশেই রয়েছে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে মাস্ক ব্যবহার আবশ্যক। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজে বাঁচতে, এবং আশেপাশের অন্যদেরকেও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে, মাস্ক পরা অতি জরুরি। আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত মাস্ক পরিধান করে নিজেকে বাঁচানো, পরিবার-পরিজনকে বাঁচানো এবং দেশবাসীকে বাঁচানো করোনা মহামারি থেকে । শুধু পরিপত্র জারির মাধ্যমেই মাস্ক পরিধানের মতো কর্মসূচিকে সফল করা যাবে না। এজন্য পত্র-পত্রিকা ও বেতার-টিভিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করতে হবে। ভার্চুয়াল মিটিং করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অসচ্ছল ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে। এসবেও কাজ না হলে দেশের সব নাগরিকের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে আইন পাশ করতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান এলবিয়ন গ্রুপ।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন