২৮ অক্টোবর ২০২৫

মা হয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী, বাবা হননি কেউই

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী কখনো উপজেলা পরিষদ এলাকায়, কখনো হাসপাতাল এলাকা, কখনো কবাখালী বা বোয়ালখালী বাজারে ঘুরাঘুরি করতো। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন এ নারীকে হঠাৎ সন্তান সম্ভাবা দেখা যায়। বিষয়টি হাসপাতালের নার্সদের নজরে আসলে একাধিকবার দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ও নার্সরা সেচ্ছায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছে ওই নারীটিকে। পরবর্তীতে হঠাৎ হাসপাতালের সামনে নারীটিকে অসুস্থ অবস্থায় দেখা গেলে হাসপাতালের কয়েকজন নার্স তাকে হাসপাতালে নিয়ে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে জানতে পারেন, ওই নারী প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছে।

তাৎক্ষণিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নার্সরা মিলে কিছু টাকা তুলে দুজন নার্স সহ সরকারি এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায় তাকে। সেখানে ডাক্তার বিউটি চাকমার তত্বাবধানে ওই নারী সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। দীঘিনালা হাসপাতালের কয়েকজন নার্স মিলে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহযোগিতাসহ নবজাতক ও তার মায়ের জন্য পোষাক এবং আনুষঙ্গিক জিনিস পত্রের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে দীঘিনালা হাসপাতালে এনে সপ্তাহ খানেক রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দিলে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রী সিনিয়র স্টাফ নার্স চম্পা আক্তার সার্বিক দেখাশুনা করতে থাকেন তাকে।

মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটি খাবার ও সেবা পেয়ে আশ্রয় নেয় উপজেলা পরিষদের সামনে শিক্ষক-নার্স দম্পতির বাসার পাশের গোলঘরে। দীঘিনালা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স চম্পা আক্তার ও তার স্বামী আবদুর রাজ্জাক শিশুসহ নারীটিকে দেখাশুনা ও খোঁজ-খবর রাখতে থাকেন।

এরই মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “পাগলীটি মা হয়েছে বাবা হয়নি কেউ” নামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে বিষয়টি দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে নবজাতক ও তার মায়ের জন্য শীতবস্ত্রসহ অনান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র প্রদান করেন এবং সার্বিক দেখাশুনার জন্য শিক্ষক-নার্স দম্পতিকে ধন্যবাদ জানান। পরবর্তীতে মা ও নবজাতক শিশুটির কথা চিন্তা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাশেম, থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল হক, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার, স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় শিশুসহ ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে প্রশাসনের তত্বাবধানে একটি নিরাপদ স্থানে রাখা হয়।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দেখা যায় থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল হক তার সঙ্গীয় ফোর্সদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শিশুসহ নারীটিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন এবং চিকিৎসার সু- ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া ওই নারীর পরিচয়- ঠিকানা নিশ্চিত করে স্থানীয় হেডম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট একটি স্থানে নারীটির বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় একটি বসত ঘর করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানান দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ।

আরও পড়ুন