মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির মাঝে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে দেশটির কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষ হওয়া ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত দিয়েছে বিজিপি। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়নটির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
তিনি জানান, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে এ পতাকা বৈঠকটি অনুষ্টিত হয়েছে। বৈঠক শেষে দেশটিতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগকারি ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফেরত আসারা হল, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা শাকের উল্লাহ (২৮), এখলাছ মিয়া (২৬), শফি আলম (২৫), মো. পারভেজ (২৪), মিজানুর রহমান (১৮), মোবারক মিয়া (২৪), মো. মহিউদ্দীন (২২), ছালামত উল্লাহ (১৭), মং থিন (৪২), গিয়াস উদ্দিন (২২), রাকিবুল হাসান রাকিব (২২), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও মোবারক উদ্দিন (১৮)।
উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মো. শাহেদ (১৮), মো. তারেক (১৮) ও মো. সাবের (২৯)।
টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মো. ইরফান (২২), মো. ইলিয়াছ (১৯), মো. জহির আহমেদ (৩১), মো. আব্দুল আজিজ (২১), মো. তৈয়েব (৩২), আব্দুর সিদ্দিক (২৭) ও মো. রুবেল (২০)।
বান্দরবানের সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সিন খেয়ে মং মার্মা (৩২), থুইচিং প্রু (২৩) এবং লামা উপজেলার থার তুন হ্লা (৩৬)।
এছাড়া রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ইয়ং ছা থুই মার্মা (২৬), ইউ তান ওয়ারা ওরফে স্যার থুই ইউ (৩৪) ও থান হ্লা সিন ওরফে সোয়ে সিন ওরফে ইউসিচিং মার্মা (৩০)।
সংবাদ সম্মেলনে লে. মহিউদ্দীন আহমেদ আরো বলেন, সকালে মিয়ানমারের মংডুতে অনুষ্টিত পতাকা বৈঠকে তার নেতৃত্বে বিজিবির ১৫ সদস্যের এবং বিজিপির ১ নম্বর পিউন ফিউ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইয়ে ওয়াই শো’র নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ নেন। পতাকা বৈঠকে উভয়দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এছাড়া উভয়দেশের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ, উত্তরোত্তর উন্নতি এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিধি দল দুইটির সদস্যরা ঐকমত্য ব্যক্ত করেছেন। পতাকা বৈঠক শেষে মিয়ানমারে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিজিপির প্রতিনিধি দল।
বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি এবং মিয়ানমারস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের যৌথ উদ্যোগে যথাযথ কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শেষে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ২৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
ফেরত আনা এসব বাংলাদেশি নাগরিককে স্বজনদের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৌঁছে দিতে টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
সাজাভোগ শেষে ফেরত আসা টেকনাফের বাসিন্দা মো. এরফান বলেন, আমি নাফনদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)সদস্যরা আমাকে ধরে নিয়ে যায়।
পরে তারা আমাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। দীর্ঘ ৫ বছর ৭মাস সাজা ভোগ শেষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট এর দীর্ঘদিন প্রচেষ্টার ফলে আমি দেশে ফেরত আসতে পেরেছি।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জোবাইর সৈয়দ বলেন, মিয়ানমার থেকে সাজা ভোগ শেষে ফেরত আসা বাংলাদেশী নাগরিক দের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে।












