দু’দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাসে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা, বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙ্গে ও তাঁর ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ এলাকায়। আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে শত শত পরিবার। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে উপজেলায় প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৪৪ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে এখানকার কৃষকেরা।
এদিকে ঝড়ো বাতাসের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘরের টিন উড়ে গেছে। গাছ ভেঙ্গে চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা গাছগুলো নিজ দায়িত্বে সরিয়ে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, ইছাখালী, দুর্গাপুর, মায়ানী, ওয়াহেদপুর, জোরারগঞ্জ, সাহেরখালী, ইছাখালীসহ প্রায় ইউনিয়নে কৃষকদের আমন ধান জমিতে নুইয়ে পড়েছে। জমির ওপর উপড়ে পড়েছে গাছপালা। অতিবৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ফসলি জমিতে।
মিরসরাই সদর ইউনিয়নের কৃষক মো. মোস্তফা বলেন, ‘আমার প্রায় ১০ শতকের বেশি জমির ধান বাতাসের কারণে নুইয়ে পড়েছে। অল্পকয়েকদিন পরেই ধান কাটার কথা রয়েছে। শেষ মূহুর্তে এমন বিপর্যয় আশা করিনি। জানি না, ফসলের কেমন ক্ষতি হবে, তবে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।’
কৃষক কৃষ্ণ দে জানান, ‘বাতাসে ১৫শতকের বেশি জমির ধান নুইয়ে পড়েছে এবং জমিতে পানিও জমে গেছে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রায় ৩০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছি।’
উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম ময়ানী গ্রামের কৃষক মিয়াসাব বলেন, ‘আমি প্রায় ৩০ শতক জমিতে ঢেডস এর চাষ করেছি। বৃষ্টিতে আমার জমির সব ঢেডস গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া আমন ধানও পানিতে ডুবে রয়েছে।’
সরেজিমেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অনেক জমির আমন ধান পানিতে ডুবে রয়েছে। বেশিরভাগ জমির পাকা আমন নুয়ে মাটিতে মিশে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে লাগানো বিভিন্ন সবজি বীজ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার চিত্র চোঘে পড়ে। এছাড়া প্রায় সব এলাকায় বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট বাতাস ও বৃষ্টিতে ১৫০০ হেক্টর জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে। পাকা দুএকদিনের মধ্যে কাটার উপযুক্ত ধান বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের জমির আইল কেটে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি, যাতে জমে থাকা পানি চলে যেতে পারে। এছাড়া যে ধানগুলো এখনো কাটার উপযোগী হয়নি, সেগুলোর কয়েকটা ঘোচা একসাথে বেধে দেওয়ার জন্য চাষীদের বলা হয়। শীতকালীন সবজির মধ্যে লাল শাক, মুলা শাক, পালং শাকের ক্ষতি হয়েছে। দুএকদিনের মধ্যে লাগানো বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলায় আপাতত ৪৪ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি ক্ষতির পরিসংখ্যান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম সাইফুল আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আমার এরিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। মাঠে কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হিমমিশ খেতে হচ্ছে। ১২টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। তারমধ্যে দুটি ঠিক হয়েছে। ৬টি ট্রান্সফরমান নষ্ট রয়েছে এখনো। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিত স্বাভাবিক হতে পারে বলা মুশকিল।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে পুরো উপজেলায় কয়েকটি ঘরের টিন উড়ে গেছে। প্রচুর গাছপালা, বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের তালিকা পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা হাতে এলে ডিসি স্যারের কাছে পাঠানো হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় গাছ পড়ে নিহত শিশুর পরিবারকে তাৎক্ষনিক ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’
 
				












