৩০ অক্টোবর ২০২৫

মিরসরাইয়ের সৈদালী গণহত্যা দিবস আজ

সাদমান সময়, মিরসরাই»

১৯৭১ এর ২০ এপ্রিল বড়তাকিয়ার সৈদালী গ্রামে পাকিস্তানী যান্তাদের হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান ২২ নিরস্ত্র বাঙালী। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো চিহ্নিত করা হয়নি এসব গণকবর। স্থাপন করা হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ। যা নিয়ে ক্ষোভ আর হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন সৈদালী গ্রামের মানুষ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সৈদালী গ্রামে গিয়ে শহীদ ও বিরাঙ্গণা পরিবার এবং নির্যাতনের পরও বেঁচে যাওয়া মানুষজনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানায় সেসময়কার দুঃসহ সে স্মৃতির কথা। তাদের কথা মতে, ১২ বছর বয়সে জাহানারা হারিয়েছেন বাবা, চাচা, ফুফাতো ভাই। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আলাউদ্দিন হন পিতৃহারা। রৈয়ছা বেগম হারিয়েছিলেন স্বামী। অগ্নিসংযোগে পুড়ে মারা যান জোবায়দা খাতুন। সভ্রম হারান সালমা-হাজেরা (ছদ্মনাম)। সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন গ্রামের টগবগে তরুণ বজলুর রহমান। পাকিস্তানি জান্তাদের গুলিতে আহত নুরুল আলম এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি ভয়ে বেড়ান।

আহত নুরুল আলম বলেন, ‘পাকিস্তানীরা সৈদালী গ্রামের ওপর এক নারকিয় তান্ডব চালিয়েছিলো। অবাক লাগে এখনো নিহত লোকজনের কবর গুলো চিহ্নিত করা হয়নি। এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভও করা হয়নি।’

গণহত্যার শিকার শামসুল আলমের সন্তান মোহাম্মদ ইরানি বলেন, ‘আমার বাবার কবর কোথায় আমি জানি না। শুনেছিলাম পুকুরের পাড়ে কোথায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো।’

এদিকে ২০১৭ সাল থেকে সৈদালী নাগরিক ফোরাম নামে একটি সংগঠন ২০ এপ্রিল দিনটিকে সৈদালী গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। সংগঠনটির নেতাদের দাবি অচিরেই সৈদালী গণহত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হোক।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাট্য নির্দেশক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ‘সৈদালি গণহত্যা দিবস এখনো রাষ্ট্রের খাতায় নাই। এটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এখানে গণকবর চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে হবে। না হয় আগামী প্রজন্ম এটি ভুলে যাবে।’

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আমি মিরসরাইতে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। তবে এরই মধ্যে এ ধরণের গণহত্যার স্থানগুলো চিহ্নিত করার বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি। তারা আমাকে সৈদালী সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি। এখন যেহেতু জানলাম সহসা উদ্যোগ নিবো।’
প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ছায়া সুনীবিড় গণবসতিপূর্ণ একটি গ্রাম সৈদালী। স্থানীয় মায়ানী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ চার ভাগে বিভক্ত সৈদালী গ্রামে বর্তমানে ছয় হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ মানুুষ হতদরিদ্র। মুক্তিযুদ্ধকালীন গ্রামের জনসংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ শতাধিক। তার মধ্যে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে এক মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৩ জনকে। আবার নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অংশ নেন গ্রামের ২৪ কিশোর-যুবক। যাদের মধ্যে বর্তমানে ১৭জন বেঁচে আছেন।

আরও পড়ুন