মিরসরাই প্রতিনিধি »
আজ ১১ জুলাই। শোকাবহ মিরসরাই ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্ণ হলো। মিরসরাইবাসী কোনোদিন ভুলতে পারবে না ১১ জুলাই দিনটিকে। সন্তানদের জন্মদিন অনেকে হয়তো ব্যস্ততার কারণে ভুলে যান; কিন্তু মৃত্যুদিন কেউ ভোলেন না।
সেই মৃত্যু যদি ইতিহাসের পাতায় লেখা হয় সেটা তো আরও বেদনাদায়ক। ১১ বছর আগে মিরসরাইয়ে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় এক অভিভাবকসহ ৪৫ স্কুলশিক্ষার্থীর।
২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখে আবুতোরাবে ফেরার পথে সৈদালীতে একটি ডোবায় পতিত হয় শিক্ষার্থীদের বহনকারী মিনি ট্রাকটি। একে একে মারা যায় ৪৫ স্কুলশিক্ষার্থী। মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।
১১ জুলাই এলে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন স্বজনরা। স্মৃতি বলতে শুধু ছবির ফ্রেমই রয়েছে। পুত্রহারা মা-বাবারা সেই ছবি নিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আহাজারি করেন। আবার কখনও কখনও নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে একেবারেই নির্বাক হয়ে যান। দেখতে দেখতে ঘটনার ১০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও কান্না থামেনি সন্তানহারা মায়েদের। এখনও ছেলের ছবি নিয়ে নীরবে-নিভৃতে কাঁদেন গর্ভধারিণী মায়েরা। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে আদরের সন্তানের খোঁজে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন অভাগিনী মা। ওই সময় নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদৌজা চৌধুরীসহ দেশের বিশিষ্টজনরা। থেমে ছিল না দেশের সমাজসেবকদের সাহায্যের হাত। মিরসরাই ট্র্যাজেডি নিয়ে ওই সময় ধারাবাহিক সংবাদ পরিবেশন করেছিল দেশের গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও।
নিহত ছাত্রদের স্মরণে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’। নিহতদের মধ্যে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র বেশি হওয়ায় তাদের স্মৃতি রক্ষায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২০১২ সালে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’। স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’-এ নিহতদের ছবিসংবলিত বিশেষ টাইলস স্থাপন করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনাস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’ নির্মাণ করা হয়েছে।
আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার জানান, প্রতিবছর নিহতদের স্মরণে স্কুল প্রাঙ্গণে শোক সভা ও র্যালি আয়োজন করলেও এ বছর করোনা এবং লকডাউনের কারণে বড় কোনো কর্মসূচি হয়নি। তবে স্কুলের শিক্ষক, এলাকার চেয়ারম্যান, নিহত পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে সীমিত পরিসরে আবুতোরাব স্কুল প্রাঙ্গণে আবেগ ও দুর্ঘটনাস্থল অন্তিমে পুষ্পস্তবক অর্পণ হয়েছে। নিহত স্কুলশিক্ষার্থীদের স্মরণে মসজিদ, মন্দির, গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













