সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর পাগলা ঘোড়ার মতো লাপিয়ে বাড়ছে রান্নার এ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম। গত দুদিনে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে মুনাফালোভীরা। হতাশাজনক এ খবরে আশা জাগিয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। এখানকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়েছে আগের তুলনায়।
সোমবার পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে তিন হাজার ৫৭৩ মেট্রিকটন। খালাসের অপেক্ষায় আছে পেঁয়াজভর্তি আরো ডজনাধিক ট্রলার। মিয়ানমার থেকে রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হলেও জেলার স্থানীয় বাজার গুলোতেও পেঁয়াজের দাম কমেনি। অতিরিক্ত মুনাফালোভীরা যে যারমতোই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে পেঁয়াজ।
টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ হতে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ৩ হাজার ৫৭৩ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। খালাসের অপেক্ষায় হাজারের অধিক মেট্রিকটন পেঁয়াজ ভর্তি ডজনাধিক ট্রলার বন্দর ঘাটে নোঙর করে আছে। পেঁয়াজভর্তি আরো একাধিক ট্রলার স্থলবন্দরের পথে মিয়ানমার হতে রওনা দিয়েছে।
টেকনাফ স্থল বন্দর কেন্দ্রিক আমদানিকারকরা অভিযোগ করেছেন, শ্রমিক অপর্যাপ্ততার কারণে পেঁয়াজ বোঝাই ১০-১২ টি ট্রলার এখনো বন্দরে নোঙর করে আছে। শ্রমিক সংকটের কারণে পেঁয়াজগুলো ট্রলার থেকে খালাস করা সম্ভব হচ্ছেনা। এক্ষেত্রে বন্দরের শ্রমিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ গুলো স্থানীয় বাজারে চাহিদা মেটানোর পর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। সেখান থেকে একাধিক হাত বদল হয়ে পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে পেঁয়াজ গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার অস্তিতিশীল করার চেষ্টা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের রপ্তানিকারকরা টনপ্রতি গড় দাম ৩৫ হাজার টাকায় টেকনাফ স্থলবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন। আনুষাঙ্গিক খরচ যোগ করে মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ টেকনাফ বন্দর কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত কেজি প্রতি গড় দাম দাঁড়ায় ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা মাত্র। কিন্তু টেকনাফের স্থানীয় বাজারেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম হাকাচ্ছে ৮০ টাকা। আর কক্সবাজার শহর, বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজারসহ প্রসিদ্ধ বাজার গুলোতে এ দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
টেকনাফ পাইকারী বাজারের হারুন সওদাগর, নবী সওদাগরসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বন্দরের আমদানিকারকদের কাছ থেকে কেজি ৭০ টাকা দামে পেঁয়াজ ক্রয় করেছেন তারা। টেকনাফ বাজারে এনে ১০ টাকা লাভে বিক্রি করছেন ৮০ টাকায়।
সাধারণ ভোক্তাদের ভাষ্য, মিয়ানমার থেকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি হলেও কোন অদৃশ্য কারণে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছেনা। মিয়ানমার থেকে যে পরিমান পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে তাতে পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা পেরোনোর কথা নয়। অথচ সে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
ঈদগাঁও কলেজ গেইট এলাকার খুচরা দোকানী শাহ আলম সওদাগর জানান, দুদিন আগেও ৫০ টাকা দামে পেঁয়াজ কিনেছি। সোমবার পেঁয়াজ আনতে গিয়ে দেখি পাইকারি দাম চাচ্ছে ১০০-১১০ টাকা। পেঁয়াজ না কিনেই ফিরে এসেছি।
টেকনাফ স্থল বন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মো. আবছার উদ্দিন বলেন, মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে। সোমবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭৩ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বন্দরের কার্যক্রম শেষ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঘাটে পেঁয়াজভর্তি ডজনাধিক ট্রলার নোঙ্গর করা আছে, বন্দরের উদ্দেশ্যে মিয়ানমার ছাড়ছে আরো বেশ কয়েকটি ট্রলার। ফলে পেঁয়াজ আমদানি আরো বাড়তে পারে। এরপরও দামের এ তারতম্য বোধগম্য নয়।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর













